বগুড়ার বৈশাখী চরের দুটি স্কুলের আড়াইশ শিক্ষার্থী বিপাকে

যমুনার ভাঙনে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বৈশাখী চর থেকে সরিয়ে আনা একটি প্রাথমিক ও একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আড়াইশ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2020, 06:04 PM
Updated : 30 August 2020, 06:04 PM

১৩৫ বছরের পুরনো বৈশাখী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে ১২০ জন এবং ৫০ বছরের পুরনো বৈশাখী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে ১৩২ জন শিক্ষার্থী।

স্থানীয়রা জানান, বহু বছর আগে যমুনার ভাঙনে বৈশাখী চর বিলীন হয়ে গেলে এই দুটি বিদ্যালয় ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের শহরাবাড়ী এলাকায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু প্রায় ২৫ বছর আগে বৈশাখী চর আবার জেগে উঠলে লোকজন সেখানে চলে গেলে বিদ্যালয় দুটিও নিয়ে যায়। সর্বশেষ একমাস আগে আবার যমুনার ভাঙনে বৈশাখী চর বিলীন হয়ে যায়্। এখন বিদ্যালয় দুটি ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াজান চল্লিশ পাড়ায় নিয়ে আসা হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৩০ শতাংশ এবং নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৩৫ শতাংশ জমি কিনে ঘর ওঠানো হয়।

কিন্তু এই দুই বিদ্যালয়ে কিছু আসবাব তৈরি করা হলেও পর্যাপ্ত নয়। আবার বিদ্যালয়ের মেঝেতেও মাটি ভরাট না করায় পানি উঠে সেঁতসেঁতে হয়ে রয়েছে। এখানে বসে পড়ার কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এছাড়া মূল রাস্তা থেকে বিদ্যালয় দুটিতে যাওয়ার রাস্তাও কাদা-পানিতে সয়লাব। রাস্তায় মাটি ভরাট করতে হবে।

এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতে চরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হলে বৈশাখী চরের লোকজন ঘরবাড়ি ভেঙে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পশ্চিম পাশে বানিয়াজান চল্লিশ পাড়ায় চলে আসে। সঙ্গে আনে স্কুল দুটিও।

বৈশাখী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হক বলেন, স্কুলটি যমুনার ভাঙনের সময় বানিয়াজান চল্লিশ পাড়ায় নিয়ে আসা হয়। শিক্ষকদের বেতন এবং সভাপতি ও এলাকাবাসীর অনুদানে কোনোরকম ঘড় উঠানো হয়েছে।

“সরকার স্কুল খোলার ঘোষণা দিলে কীভাবে ক্লাস করাব তা নিয়ে চিন্তায় আছি। করোনার কারণে এমনিতে লেখাপড়া বন্ধ আছে। তারপর স্কুল খুললে যদি ক্লাস করাতে এবং পরীক্ষা নিতে না পারি তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”

বৈশাখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার এই নির্দেশিকাটি আগের স্থান থেকে নিয়ে আসা হয়

নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ার পারভেজ বলেন, ১৯৭২ সালে নির্মিত এই স্কুলটি ভেঙে আনার সময় তৎকালীন ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানাকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছিল। উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকেও চিঠি দিয়ে জানানো হয়।

“কিন্তু স্কুল সংস্কারে কোনো সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় নিজেরাই ৩৫ শতাংশ জায়গা কিনে কোনোভাবে ঘড় দাঁড় করেছি। সেখানে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও কাদা আর পানিতে ডুবে আছে। করোনায় এমনিতেই পড়ালেখা স্কুলে হয়নি প্রায় পাঁচ মাস। স্কুল খুললে যদি পড়ালেখা না করানো যায় ১৩২ জন  শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”

সরকারি সহায়তায় এখনই স্কুলটি লেখাপড়ার উপযোগী করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ধুনট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, তিনি কোনো আবেদন পাননি। আগের শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দেওয়া থাকলেও তিনি পাননি। আবেদন দিলে যথাযথ কর্মকর্তাকে অবহতি করবেন যাতে স্কুলটি লেখাপড়ার উপযোগী করা যায়।

বৈশাখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, যমুনার ভাঙনে স্কুলটি সরিয়ে আনা এবং স্কুল নির্মাণে অনুদান চেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন দেওয়া হয়েছে। এখনও কোনো অনুদান আসেনি।

“স্কুল খুললে ১২০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস করানো এবং পরীক্ষা কোথায় নেব তা নিয়ে চিন্তায় আছি। ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মক ব্যাহত হবে।”

বৈশাখী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ঘর

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তৌহিদুল আলম বলেন, “১৯৩৫ সালের পুরানো স্কুলটি ধরে রাখতে নিজের টাকায় ৩০ শতাংশ জায়গা কিনে কোনোভাবে ঘর উঠিয়েছি। সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে নির্মাণ না করলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া সম্ভব নয়।”

ধুনট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসী আখতারকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মোহন্ত বলেন, “আমাকে কেউ বিষয়টি অবহিত করেনি। জানালে সাধ্যমত ব্যবস্হা নিতাম। উনারা বিস্তারিত জানিয়ে আবেদন দিলে গুরুত্ব সহকারে দেখব বিষয়টি।”

স্থানীয় ভান্ডারাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদ্যালয় দুটি আমি দেখেছি। আমার কাছে সহয়াতা চাইলে সাধ্যমতো করব।”