শ্রীমঙ্গল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সহিদুর রহমান সিদ্দিকি জানান, হাইল হাওরের আয়তন ১৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পড়েছে ১০ হাজার হেক্টর। এর ভিতরে বিল (গভীর অংশ যেখানে সারা বছর পানি থাকে) রয়েছে ৫৯টি। তার মধ্যে ২০ একরের চেয় ছোট বিল ৩৯টি এবং ২০টির আয়তন ২০ একরের উপরে। এখান থেকে উপজেলার মাছের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এই বিলগুলো হাওরের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এখানে প্রায় শত প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেত। বর্তামানে প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বিল দখল করে সেখানে খামার গড়ে তোলার কারণে বিলুপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাওরের বাকি অংশ পড়েছে সদর উপজেলায়।
সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, “সদর উপজেলায় রয়েছে হাওরের ৫৫টি বিল। এর মধ্যে ১০-১২টি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অন্যগুলোও হুমকির মধ্যে রয়েছে।”
হাওরের চইড়া বিলে গিয়ে দেখা গেছে, বিলের পাড়ে গাছের চারা লাগানো হয়েছে। কয়েকটি টংঘরও সেখানে আছে। এসেছে বিদ্যুৎও।
এমন অবস্থা চললে অচিরেই হাওরের চিহ্নও থাকবে না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাওর পারের বাসিন্দা পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার রুকাম মিয়া, জুয়েল মিয়া, আকাশ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জেলে বলেন, চইড়া বিল এখন আর বিল নেই। সেখানে মাছের খামার হয়েছে।
খামারের একজন পরিচালক পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার দিলু মিয়া।
দিলু বলেন, “আমরা জমি কিনে খামার করেছি।”
ভাড়াউড়া এলাকার সুন্নত মিয়া নামে এক মৎস্যজীবী জানান, তারা অন্যায়ভাবে সরকারি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেছে। তাদের কারণে হাওর সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে এই বিলে থাকা দেশি মাছের বংশ তো শেষ হয়েছেই, সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদও ধ্বংস হয়েছে। এসব উদ্ভিদ গবাধিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হত।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মামুন আহমদ বলেন, “এই হাওরের হাজার হাজার একর জমি দখল করে মাছের খামার করেছে রাঘববোয়ালরা। এরা এখন সমাজের মাথা।”
সংগঠনটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, “দেশি মাছ রক্ষা করি সমৃদ্ধ দেশ গড়ি’—প্রধানমন্ত্রীর এই শ্লোগান বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের হাওর ও উন্মুক্ত জলাশয় রক্ষা করতে হবে। হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা শতভাগ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সামনে বড় রকমের বিপর্যয় আসবে।”
হাইল হাওর দেশি মাছের অভয়াশ্রম। কিন্তু আজ তা হুমকির মুখে। এতে শংকায় রয়েছে পরিবেশবাদীরা।
শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক দ্বিপেন্দ্র ভট্টাচার্য্য বলেন, “হাইল হাওর একসময় এত গভীর ছিল যে এখান দিয়ে স্টিমার চলত। এ অঞ্চলের চলাচলের মাধ্যমই ছিল এই হাওর। শ্রীমঙ্গল শহরতলির উত্তর ভাড়াউড়ার হাওর অভিমুখে জেটি ছিল। এখন সেই জেটির নামে জেটি রোড রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম জানান, দখলদারদের উচ্ছেদ করে আবার বিলের চেহারা ফিরিয়ে আনা হবে। যারা সরকারি জমি দখল করবে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, তিনি এ জেলায় নতুন এসেছেন। তবে ইতোমধ্যেই তিনি জেনেছেন এটি একটি বৈচিত্র্যময় জেলা। যেখানে রয়েছে হাওর, পাহাড়, সমতল ভূমি, নদী ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। এ জেলার বৈশিষ্টই হল এর প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র। এটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে জেলাটি ঐতিহ্য হারাবে।
হাওরের ভরাট হওয়া বিলগুলো খননের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে আনবেন বলে তিনি জানান।