রাবিতে ধর্ষণের অভিযোগের তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের এক উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগ দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2020, 02:34 PM
Updated : 27 August 2020, 02:34 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছে ছাত্র ফেডারেশন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগীতের উপপরিচালক রকিবুল হাসান রবিনের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর অভিযোগ, শিশু অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করেছিলেন রবিন।

মানববন্ধনে রাবি ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, রাজশাহী মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জিন্নাত আরা, মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক আহ্বায়ক ইয়াসিন আরাফাত, রাবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফুল আলম প্রমুখ।

সেখানে জিন্নাত আরা বলেন, “আমরা সামাজিক ফেইসবুকে জেনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সঙ্গীত প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীর বাবা ও মা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “গত কয়েক বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেল কোনো কার্যকারী ভূমিকা রাখতে পারেনি। প্রতিবারই অভিযোগ আসলে তা নিয়ে তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হয়েছে।

“আমরা এ বিষয়ে আর কালক্ষেপণ চাই না, যদি সঙ্গীত প্রশিক্ষক অপরাধী হন, তাহলে তার বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এতে সংহতি জানিয়ে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, “ছোট ছোট শিশুরা যখন তার কাছে গান শিখতে যায়, তখন যদি সম্মানহানি, শ্লীলতাহানি ঘটে, সেই বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে মানসিক বিকাশে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তা এই সমাজকে স্পর্শ করে।

“কাজেই টিএসসিসির রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খতিয়ে দেখুক।”

গত ২৩ অগাস্ট দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির সঙ্গীতের উপপরিচালক রকিবুল ইসলাম রবিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীর বাবা ও মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

ওই ছাত্রী অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, তিনি রকিবুল হাসান রবিনের কাছে গান শিখতেন। ২০১০ সালে যখন তার বয়স ১২ বছর, তখন রবিন তাকে ধর্ষণ করেছিলেন। তাকে বারবার ভয় দেখিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছেন এবং একাধিকবার ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই তরুণী।

এতে মানসিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পড়াশোনা, সামাজিক জীবন ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ন্যায়-অন্যায় বোধ, অকপটে বলার সাহস এবং সামাজিক সমর্থন না পাওয়ার আশঙ্কায় সে সময় তিনি ঘটনা প্রকাশ করতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন তার অভিযোগপত্রে।

তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, তিনি জানতে পেরেছেন রকিবুল আরও অনেকের সঙ্গে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছেন। আর যেন কারও ক্ষতি করতে না পারেন সে কারণে এর প্রতিকারের জন্য তিনি মুখ খুলেছেন।

টিএসসিসির এক সময়ের সঙ্গীত প্রশিক্ষক রকিবুল হাসান রবিন বর্তমানে সেখানেই সঙ্গীতের উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে রকিবুল হাসান রবিন বলেন, “ওই মেয়েকে আমি দীর্ঘদিন গান শিখিয়েছি। ২০১০ সালের পরও আমরা এক সঙ্গে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। এ ধরনের অভিযোগ তখন তোলেনি কেউ। আজ অনেক পর বছর কেন?”

তিনি আরও বলেন, “মেয়েটির বাবার সঙ্গে সাংগাঠনিক জায়গায় একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। সেটার বশবর্তী হয়ে তিনি এ ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন।”

এদিকে, উপাচার্যের কাছে অভিযোগপত্র জমাদানের দিনই সন্ধ্যায় রকিবুল মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাতেও তিনি উল্লেখ করেছেন, “শুধুমাত্র সাংগঠনিক দ্বন্দ্বের কারণে অভিযোগকারীর বাবা ঈর্শার বশবর্তী হয়ে তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটনা করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন।”

অভিযোগ তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের সভাপতি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজিনা লাজ বলেন, “আমি অভিযোগ দেওয়ার দিনই বিষয়টি জেনেছি। তবে অভিযোগের নথিটি এখনো আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন থেকে পাইনি। পেলে তদন্ত শুরু হবে। ”