এদিকে জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশ বুধবার বিকালে এসআই শামীমকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ওই তিন যুবকের একজন খলিল মাঝির স্ত্রী শারমিন বেগম সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার বিকালে থানার কাছে ডেকে নিয়ে তার হাতে ছয় হাজার টাকা দিয়েছেন তদন্তের মুখে পড়া এসআই শামীম।
গত ৪ জুলাই ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী শহরের দেওভোগের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। তাকে না পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় জিডি ও মামলা করে তার পরিবার। ওই মামলায় পুলিশ আব্দুল্লাহ, রকিব ও নৌকার মাঝি খলিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৯ অগাস্ট তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। সেখানে তারা ‘অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার’ দায় স্বীকার করেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই শামীম আল মামুন।
এদিকে ঘটনার ৫১ দিন পর ২৩ অগাস্ট ওই কিশোরী মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে এনে পুলিশ সোর্পদ করে পরিবারের লোকজন। আদালতের নির্দেশে মেয়েটি এখন পরিবারের জিম্মাতেই আছে।
ফিরে আসার পর ওই কিশোরী আদালতে বলেছে, ইকবাল নামের এক যুবককে বিয়ে করে বন্দর এলাকার এক ভাড়া বাড়িতে সংসার পেতেছিল সে।
মেয়েটি ফিরে আসার পর অভিযোগ ওঠে, জিজ্ঞাসাবাদে মারধর না করার কথা বলে গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম।
জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, এ ঘটনা ‘চাঞ্চল্যের’ সৃষ্টি হয়েছে। আসামিদের স্বীকারোক্তি ও ওই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে দুটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্তের স্বার্থে এসআই শামীমকে থানা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে গঠিত একটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা বুধবার সকালে শহরের দেওভোগ এলএন রোড এলাকায় সেই মেয়েটির বাড়িতে যায়। তারা ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন।
ওই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তারা মেয়েটি এবং তার পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দি নিয়েছেন।
“নিখোঁজের পর ওই কিশোরী ৫১ দিন কোথায় ছিল, কার টেলিফোন কল পেয়ে সে ঘর থেকে বের হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।”
আসামিদের স্বজনদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া, তা ফেরত দেওয়া এবং ভয়ভীতি দেখানোর প্রমাণ পেলে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন ডিবির এসপি।
এসআই শামীমকে সরিয়ে দেওয়ার পর ওই ‘অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা’ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাইকে।
আগামী বৃহস্পতিবার কিশোরীর কথিত স্বামী ইকবালের রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে। সদর মডেল থানা পুলিশ ওই অপহরণ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে।