কুড়িগ্রামে ‘বিকল্প বীজতলায়’ বন্যা মোকাবিলা

কুড়িগ্রামে তিন দফা বন্যায় আমন বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ‘বিকল্প বীজতলা’ তৈরি করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2020, 08:51 AM
Updated : 26 August 2020, 09:32 AM

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমি কর্ষণ, বীজ সংগ্রহ ও বপনে বাড়তি অর্থ ব্যয়ে যখন কৃষক দিশেহারা, তখন ঘাটতি কমাতে সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি বীজতলা, ভাসমান বীজতলা ও বাড়ির ভিতর প্লেট পদ্ধতিতে বিকল্প বীজতলা করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

সরকারি প্রণোদনায় এসব বীজ বিনামূল্যে পেয়ে নতুন উদ্যোমে মাঠে নেমেছে কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়,  চলতি বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কৃষক। সরকারিভাবে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ২৫ হাজার ৮১০ জন কৃষকের আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৪০৯ হেক্টর জমিতে। আমন বীজতলার ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারিভাবে ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা, ১১২টি ট্রে বীজতলা এবং শতাধিক ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ২১ হাজার কৃষক বিনামূল্যে ২০ হাজার ৯২২ বিঘা জমিতে আমন চাষ করার সুযোগ পাচ্ছে।

জেলায় এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৫৩৫ হেক্টরে রোপন করা হয়েছে। আমন বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৩ হেক্টর হলেও তৈরি হয়েছে ৭ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে।

বুধবার সকালে কিছু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বন্যার পানি থেকে রেহাই পেতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সহযোগিতায় বাড়ির ভিতরের উঁচু উঠোনে বীজতলা তৈরি করেছেন জেলার কৃষকেরা।  

উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লালদীঘির পাড় এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, “বাড়ির পাশের বীজতলা এবারের বন্যায় ডুবে যায়। এসময় কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শ চাইলে তারা বাড়ির উঠোনে বীজতলা তৈরি পরামর্শ দেয়। তাদের কাছ থেকে ৬ কেজি বিআর-২২ নাভিজাত বীজ ও ৫২টি ট্রে বাড়িতে নিয়ে আসি। তখন চারদিকে থৈ থৈ পানি। তাই বাড়ির ভেতর উঠোনে ট্রে-তে বীজতলা করি।”

কৃষি বিভাগ থেকে রাইচ ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে শতকে ১০টাকা হারে দুই বিঘা জমিতে মাত্র ৩৩০ টাকা খরচেই রোপণের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

একই ইউনিয়নের পাঁচপীর ছড়ারপাড় গ্রামের কৃষক সেতু মিয়া জানান, তিনি ১০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বন্যায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। পরে কৃষি বিভাগের সহায়তায় বাড়ির পাশে বিলের মধ্যে ভাসমান বীজতলা তৈরি করেন।

তিনি বলেন, “১২টা ভাসমান বেডে ১২ কেজি বীজ লেগেছে। আর চার দিন পর চারার বয়স ২০দিন হলেই চার বিঘা জমিতে লাগাতে পারব।”

পাঁচপীর সরকারবাড়ির আব্দুর রহমান বলেন, “আমাদের গ্রামে কৃষি বিভাগ উঁচু এক একর জমি লিজ নিয়ে সেখানে ৩০০ কেজি বিআর-২৩ নাভীজাত বীজ বপন করেছে। এই বীজ ৬৬ জন কৃষক ২২ একর জমিতে লাগাতে পারবে। চারার বয়স ১৮ দিন হয়েছে। আর দুদিন পরই লাগানো যাবে। দীর্ঘস্থায়ী তিন দফা বন্যার ধকল কাটাতে কৃষি বিভাগের এই সহায়তা বন্যাকবলিত কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, আমন আবাদ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য বন্যা-পরবর্তী কৃষি পূনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর জেলায় আমন চারার ঘাটতি মোকাবেলায় ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা, ১১২টি ট্রে বীজতলা এবং শতাধিক ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে, যা বিনামূল্যে কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এর ফলে বীজতলার ঘাটতি পুরণ করতে পারবে কৃষক।