‘ধর্ষণ-হত্যার’ তিন যুবকের স্বীকারোক্তির পর কিশোরীর প্রত্যাবর্তন, পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত

নারায়ণগঞ্জে  অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে তিন যুবকের জবানবন্দির পর ওই কিশোরীকে জীবিত পাওয়ার পর পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2020, 04:32 PM
Updated : 26 August 2020, 03:18 AM

ঘুষ গ্রহণ, নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে; কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ৪ জুলাই ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী শহরের দেওভোগ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন তাকে না পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় জিডি এবং মামলা করেন।

তিন যুবক (বাম থেকে) রকিব, খলিল ও আব্দুল্লাহ আদালতে জবানবন্দি দেন

ওই মামলায় পুলিশ অটোরিকশা চালক রকিব, আব্দুল্লাহ্ ও খলিলকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিলটন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার দায় স্বীকার করে বলে জবানবন্দি দেন।

এদিকে, ঘটনার ৫১ দিন পর গত ২৩ অগাস্ট ওই কিশোরী তার মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে পরিবারের লোকজন তাকে এনে পুলিশে সোর্পদ করে।

ফিরে আসার পর ওই কিশোরী আদালতে জানিয়েছে, ইকবাল নামের এক যুবককে বিয়ে করে বন্দর এলাকার এক ভাড়া বাড়িতে সংসার পাতে সে। আদালত এখন ওই কিশোরীকে তার পরিবারের জিম্মায় দিয়েছে।

এদিকে ওই মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও ৪৭ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন আসামিদের স্বজনরা।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই শামীমকে সরিয়ে দিয়ে পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাইকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে বলে ওসি আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই কিশোরী জীবিত ফিরে আসায় তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো তদন্তে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (অপরাধ) কেএম মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া গত সোমবার এ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

“যেহেতু আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কী কারণে তারা আদালতে ওই জবানবন্দি দিয়েছিলেন সেই বিষয়টি এবং প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে আগের এ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

উচ্চ পর্যায়ের ওই তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে পেশাদারিত্বের সাথে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে আশা করছেন এসপি।

মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, ওই কিশোরীকে বিয়ে পড়ানো এবং বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত কাজি ও বাড়ির মালিককে আটকের চেষ্টা চলছে।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান জানান, ওই কিশোরীর কথিত স্বামী ইকবালকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। আদালত আগামী ২৭ অগাস্ট রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য হয়েছে।