‘ধর্ষণ-হত্যায়’ আসামির স্বীকারোক্তি, পরে কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জে এক কিশোরীকে অপহরণের পর ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে তিন যুবকের জবানবন্দির পর মেয়েটিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2020, 03:53 PM
Updated : 24 August 2020, 03:53 PM

গত ৪ জুলাই মেয়েটিকে অপহরণ করার অভিযোগে তার পরিবার মামলা করে। ২৩ অগাস্ট তাকে ফিরে পান স্বজনরা।

এই ঘটনায় পুলিশের তদন্ত ও তিন আসামির আদালতে দেওয়া জবানবন্দি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে জেলা পুলিশ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

তিন যুবক (বাম থেকে) রকিব, খলিল ও আব্দুল্লাহ আদালতে জবানবন্দি দেন

১৫ বছর বয়সী এই কিশোরী উদ্ধার হওয়ায় তার পরিবারে স্বস্তি ফিরে এলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিন আসামির স্বজনরা।

এদিকে, মেয়েটির মা বলেছেন তার মেয়ে অন্য এক ছেলেকে বিয়ে বসবাস করছিলেন। ইকবাল নামের ওই ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে।

তারা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীমের বিরুদ্ধে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে মারধর না করার কথা বলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

তবে এই পুলিশ কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। 

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেয়েটি জীবিত ফিরে আসায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তে কোনো গাফিলতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ পর্যায়ের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

“তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীমের মামলা তদন্তের বিষয়সহ আসামির পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়াসহ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

তদন্তে এসআই শামীমের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এসপি জানান।

মামলায় ওই কিশোরীর বাবা উল্লেখ করেছিলেন, আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। এতে বাধা দিলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেন। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ফোনে ডেকে নিয়ে ওই তার মেয়েকে গাড়িতে তুরে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। এরপর থেকেই তার মেয়ের কোনো খোঁজ নেই।

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৯ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিল্টন হোসেন ও বিচারিক হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ওই তিন আসামি।

“স্বীকারোক্তিতে তারা বলেন, মেয়েটিকে অপহরণ করে দলবেঁধে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেন এবং শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেন।”

পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, রোববার [২৩ অগাস্ট] মেয়েটিকে জীবিত খুঁজে পায় তার বাবা-মা। বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে তার মা-বাবা তাকে উদ্ধার করে সদর থানায় এসে হস্তান্তর করলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে মেয়েটির মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার মেয়ে রোববার দুপুরে মোবাইলে ফোন করে তাকে চার হাজার টাকা পাঠানোর জন্য বলেন। তিনি ফোন পেয়ে অবাক হয়ে যান। তখন বিষয়টি তার বাবা ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। পরে বন্দরের নবীগঞ্জ ফোন ফ্যাক্সের দোকান থেকে মেয়েকে নিয়ে আসেন।

তিনি বলেন, “আমার মেয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। সে ইকবাল নামের এক ছেলেকে বিয়ে করে বন্দরে বসবাস করছিল। মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে এখন আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমারা তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেব।”

এ ব্যাপারে আসামি আব্দুল্লাহ্র মা শিউলী বেগম এবং খলিল মিয়ার স্ত্রী শারমিন বেগমের অভিযোগ, তদন্তকারী কর্মকর্তা তিন আসামির পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ৪৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই শামীম আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কিশোরী অপহরণ মামলায় আব্দুল্লাহ্ ও রকিব দুই আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে ওই দুই আসামিসহ তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় কিংবা আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেয়েটি নারায়ণগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আফতাবুজ্জামানের আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনিআইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। কিশোরীকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়ার জন্য নারী ও শিশু আদালতে আবেদন করেছেন তার বাবা।

এছাড়া ইকবাল নামের যুবককে পুলিশ আটক করেছে বলেও তিনি জানান।