অরক্ষিত হাতিয়া, প্লাবিত ৩০টি গ্রাম

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সাড়ে ১৫ কিলোমিটার বাঁধের সংকটে টানা বৃষ্টি আর জোয়ারে দশটি ইউনিয়নের বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2020, 06:35 PM
Updated : 22 August 2020, 07:12 PM

এসব এলাকায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকের রান্না বন্ধ হয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটও।  অনেক পরিবারকে উঁচু সড়ক ও বেড়িবাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

এছাড়া, জোয়ারের পানিতে নিঝুম দ্বীপে নতুন সৃজিত বনের বহু গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।

বনবিভিাগ জানিয়েছে, বনের ভেতর থেকে হরিণের দল লোকালয়ে উঁচু জায়গায় উঠে এসেছে। অনেক হরিণ জোয়ারে ভেসে যাওয়ার শঙ্কাও করছেন তারা।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, হাতিয়ার সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কোনো বেড়িবাঁধ নাই।  আর আম্পানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

তিনি জানালেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রেভিনিউ খাতের অর্থে নতুন সাড়ে সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এছাড়া পুরো হাতিয়া উপজেলায় নদী ভাঙন রোধ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ২১শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম জানান, টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০ ইউনিয়নের অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

“এতে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ গত ছয়দিন থেকে পানিবন্দি হয়ে আছে। জোয়ারে ভেসে গেছে বসতঘর, দোকানপাট, পুকুরের মাছ; নষ্ট হয়েছে পাকা আউশ ধান।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী সময়ে হাতিয়ায় ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় গত ছয়দিন ধরে সকাল-বিকাল দুই বেলার অস্বাভাবিকভাবে তাদের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

এছাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙে সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা ও তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া  গ্রামে বাড়িঘর জোয়ারে ভেসে যাওয়ায় অনেক পরিবার উঁচু সড়ক ও বেড়ির উপরে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

সুখচর ইউনিয়নের চরআমান উল্যা, বৌ বাজার, চেয়ারম্যান বাজার, নলচিরা ইউনিয়নের তুপানিয়া, নলচিরা ঘাট, আফাজিয়া বাজার, চর ঈশ্বর ইউনিয়নের তালুদার গ্রাম, ফরাজী গ্রাম, ৭ নম্বর গ্রাম, মাইচচা মার্কেট এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোনাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, বাড়িঘর, হাট বাজার ও সড়কে পানি জমে থাকায় অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।

নিঝুম দ্বীপে বেড়িবাঁধ না থাকায় তীব্র জোয়ারে নামার বাজার, শতফুল, ছায়াবীথিসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ ফুট পানি উঠেছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন জানান, জোয়ারে তিন হাজার গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া ভেসে গেছে। পুকুর ও ঘেরের অন্তত তিন কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।

“বাড়িঘরে কোমর পর্যন্ত পানি জমে থাকায় অনেক পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। জোয়ারের তোড়ে সবগুলো কাঁচা এবং পাকা সড়ক বিধস্ত হওয়ায় দ্বীপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। ”

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া চার মেট্রিক টন চাল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলছেন তিনি।

এ পরিস্থিতিতে সকাল থেকে ব্যক্তিগতভাবে দুই হাজার পরিবারের মাঝে চিড়া-মুড়ি বিলিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বন বিভাগের নিঝুম দ্বীপ বিট কর্মকর্তা এসএম সাইফুর রহমান জানান, জোয়ারে দ্বীপের চৌধুরী খালের পাশে নতুন সৃজিত ৫০ হেক্টর বনের গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ৪০ হাজার ৩৯০ একর বনভূমিতে প্রায় পাঁচ ফুট পানি উঠে যায়।

“বনের ভেতর থেকে হরিণের দল লোকালয়ে উঁচু জায়গায় উঠে আসে “

অনেক হরিণ জোয়ারে ভেসে যাওয়ার শঙ্কাও করছেন তিনি।

২০০১ সালে সরকার জাতীয় উদ্যান ঘোষিত নিঝুম দীপের বনে প্রায় পাঁচ হাজার হরিণ রয়েছে।

হাতিয়ার সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদোউস অভিযোগ করেন, অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় এবং এ বছর আম্পানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় অস্বাভাবিক জোয়ারে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

“নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ির মেরামত দ্রুত না করা গেলে মানুষকে দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।”

শনিবার দুপুরে কিছু ত্রাণ নিয়ে হাতিয়ার নলের চরে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জেলার ডিসি খোরশেদ আলম খাঁন।

তিনি বলেন, দুর্গত এলাকায় দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ হচ্ছে।

এসব এলাকায় সরকারিভাবে বরাদ্দ ৪০ মেট্রিক টন চাল রোববার থেকে বণ্টন করার কথা রয়েছে।