গোপালগঞ্জে বন্যা কবলিত ১ হাজার পরিবারের ঠাঁই আশ্রয়কেন্দ্রে

গোপালগঞ্জে বন্যা পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বন্যা কবলিত এলাকায় ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজারেরও বেশি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2020, 09:29 AM
Updated : 21 August 2020, 09:29 AM

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, বন্যায় জেলায় পাঁচ উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নের ৩২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব অঞ্চলের ২০ হাজার পরিবার এখনও পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বন্য কবলিত এলাকাগুলোতে ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। যেখানে ১ হাজারেরও বেশি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আরও দেড়শটি আশ্রয়কেন্দ্র জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তত রাখা হয়েছে।   

“এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের মাঝে এ পর্যন্ত ২১০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।”

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের ডিডি ড. অরবিন্দু  কুমার রায় জানালেন, গোপালগঞ্জে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তারপরও বিল এলাকা বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বিলের পানি খাল, নালা ও ডোবা দিয়ে নদীতে নামে। কিন্তু এখানে খালের নাব্যতা নেই। অনেক নালা ও ডোবার অস্তিত্ব অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে অতিবৃষ্টি হলেই বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

এত ফসলের ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বন্যায় ১ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমির আউশধান, সবজি, আমন ধানের বীজতলা ডুবে এ জেলার ৫ উপজেলায় ২০ কোটি ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।“

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাবুল বলেন, “আমার ইউনিয়নে ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি। ২০০ মাছের পুকুর ভেসে গেছে। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব মিলিয়ে আমার ইউনিয়নে অন্তত ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।“

কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনয়নের বাঘিয়ার বিলের রামনগর গ্রামের কৃষক খিতিশ বল্লভ (৬০) বলেন, “সাত ৭ দিন আগে পানি কমতে ছিল। কিন্তু আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বিলের পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। বাড়িঘর ডুবে আছে। গরু-বাছুর, হাস-মুরগি ও পরিবার পরিজন নিয়ে কচুরির ধাপে আশ্রয় নিয়েছি। অনেক পরিবার বড় রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে।”

একই উপজেলার রামনগর গ্রামের গ্রহবধূ লতিকা বাকচী (৫৬) বলেন, “অনেক আগেই মাছের পুকুর ডুবেছে। সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গছে। তারপর বাড়িঘরে পানি উঠেছে। আঙ্গিনার সব সবজি গাছ মারা গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। এখন গবাদিপশু দিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছি।”

কোটালীপাড়া উপজেলার মাছবাড়ি গ্রামের নিত্যানন্দ বিশ্বাস (৬৫) বলেন, বন্যা আমাদের, মাছ, সবজি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। বন্যায় এখন আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসন আমাদের গ্রামে সরকারি ত্রাণ দিচ্ছে।”

বন্যা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, “মধুমতি নদীর পানি এখন ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া অব্যাহত বর্ষণে জেলার বিল এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।”

এদিকে এ বছর বন্যায় জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি মৎস্য সেক্টরে হয়েছে বলে গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী জানান।

তিনি বলেন, “জেলার প্রায় সাত হাজার পুকুর ভেসে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর এত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ৬ হাজার মৎস্য চাষি।”

গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, আমার এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত ৫ উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নের ৩২৫টি গ্রামে ৫ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সেখানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।