বহুল আলোচিত এ আদিবাসী নেতার ২০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে মঙ্গলবার ফের এ মামলার বিচার শেষ করার দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ২০তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুরে আলফ্রেড সরেনের সমাধি প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা এবং স্থানীয় কদমতলীর মোড়ে বিক্ষোভ করা হয়।
২০০০ সালের ১৮ অগাস্ট ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে সন্ত্রাসীদের হামলায় আলফ্রেড সরেন খুন হন। ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে আদিবাসী পল্লীর ১১টি পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা। ওই হামলায় আদিবাসী মহিলা-শিশুসহ প্রায় ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার জন্য সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছিল।
২০ বছর আগে সরেন ভূমিদস্যুদের হাতে নিহত হলেও এখনও ওই মামলার কোনো সুরাহা না হওয়ায় সংশয়ে রয়েছেন আদিবাসীরা।
ওই পল্লীর ছেড়ে সাক্ষীরা চলে যওয়ায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছোট বোন রেবেকা সরেন।
নিহত সরেনের ছোট ভাই মহেশ্বর সরেন বলেন, “আসামিরা এখনও আমাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। ৬৩ বিঘা জমির মধ্যে ৩৩ বিঘা জমি তারা জবরদখল করে নিয়ে নিয়েছে। বাকি ৩০ বিঘা জমিরও ভূমি অফিসের যোগসাজেসে ‘চেক’ কেটে নিয়েছে।
“আমার ভাই হত্যার পর আদিবাসীরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে বিচারের দাবিতে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
আলফ্রেড সরেন হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মাথায় তার মা ঠাকুরানী সরেন মারা যান। সরেনের বাবা গায়না সরেনও মারা গেছেন। সরেনের স্ত্রী জোছনা সরেন বর্তমানে এ পল্লীতে বাস করেন না। তাদের চার বছরে মেয়ে ঝর্ণা সরেন বড় হয়ে বিয়ে করে ঢাকায় থাকেন। সেখানে এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন।
আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এবং নওগাঁ জেলা সিপিবির সভাপতি মহসীন রেজা জানান, আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই কমল সরেন, ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদী হয়ে হত্যা এবং জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুইটি মামলা করেছিলেন। মামলায় পুলিশ ৯১ জনকে আসামি করে আদালতে অবিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। ওই সময় নওগাঁ দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়। ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
তিনি আরো জানান, চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জননিরাপত্তা আইন বাতিল করে।
“এরপর বাদীরা অ্যাপিলেট ডিভিশনে মামলা করেন। বর্তমানে আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলাটি অ্যাপিলেট ডিভিশন শুনানি শেষে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য হাই কোর্ট ডিভিশনে প্রেরণ করেছে।”
রিটগুলো দ্রুত শুনানি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
সরেনের ২০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে তার সমাধীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুস্পস্তবক অর্পন করেন সিপিবির নওগাঁ জেলার সভাপতি মহাসিন রেজা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা এবং বাসদের জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল, পঞ্চানন বর্মা, সকালই পাহান, সোনামণি সরেন সহরা, রেবেকা সরেনের নেতৃত্বে জাতীয় আদিবাসী ইউনিয়ন, রবীন্দ্রনাথ সরেনের নেতৃত্বে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক মায়ের শাহরিয়ার রেজা, জেলা কমিটির সেক্রেটারি শামীম আহসানসহ আরো অনেকে।