যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত পলাতক জব্বারের মৃত্যুর খবর

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পিরোজপুরের সাবেক সাংসদ জাতীয় পার্টির নেতা আবদুল জব্বার পলাতক অবস্থায় বিদেশে মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে তার পরিবারের তরফ থেকে।

পিরোজপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2020, 01:13 PM
Updated : 18 August 2020, 08:01 PM

তবে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।

জব্বারের শ্যালক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শফিকুল আলম বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকালে এক ফেইসবুক পোস্টে তার বোনের স্বামীর মৃত্যুর ওই খবর দেন।

শফিকুল সেখানে লেখেন, “আমার বড় দুলাভাই, যাকে আমি দুলাভাই সাহেব বলে ডাকতাম। তিনি হলেন এমএ জব্বার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই।”

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জব্বারের ছোট ভাই আবু জাহেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার রাতে সেখানেই তিনি মারা যান।

৯০ বছরের বেশি বয়সী জব্বার ভারতের কোথায় আছে তা বলতে রাজি হননি তার ছোট ভাই। তবে সেখানেই মঙ্গলবার জব্বারকে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।  

এক প্রশ্নের জবাবে আবু জাহেদ বলেন, তার বড় ভাইয়ের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন, তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।

এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে কী তথ্য আছে জানতে চাইলে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ বলেন, তিনি এখনও কিছু জানেন না।

আর মঠবাড়িয়া থানার ওসি মো মাসুদুজ্জামান মিলু বলেন, “ফেইসবুকে আমি দেখেছি। কিন্তু অফিসিয়ালি কোনো তথ্য আমার কাছে আসেনি।”

যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার রাজাকার আবদুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।

চারটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একটিতে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। যুদ্ধাপরাধে জব্বারকেই প্রথম কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেয় এই ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ জব্বার করেছেন, তাতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল। তারপরও বয়স বিবেচনায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জব্বার সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় তার মেয়ের কাছে ছিলেন বলে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

পেশায় প্রকৌশলী আব্দুল জব্বার ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে’ চেয়ারম্যান- মেম্বারদের ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির সংগ্রাম যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত, তখনও মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসাবে মঠবাড়িয়া-বামনা-পাথরঘাটা আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জব্বার সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন। পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা দিতে শান্তি কমিটি গঠন করা হলে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হন তিনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জব্বার আত্মগোপনে চলে যান। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরা জিয়াউর রহমানের আমলে আবার রাজনীতি করার সুযোগ পেলে জব্বারও সক্রিয় হন।

১৯৮৬ সালে তিনি যোগ দেন সেনা শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে; পিরোজপুর-৪ আসন থেকে হন সাংসদ। ১৯৮৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে টিন ও চাল আত্মসাতের মামলা হয়। মামলা এড়াতে তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেও ২০০১ জাতীয় পার্টিতে ফেরেন। পরে তিনি জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানও হন।

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম একাত্তরের শীর্ষ ৫০ যুদ্ধাপরাধীর একটি তালিকা করেছিল, যাতে আব্দুল জব্বারের নামও ছিল।

[এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় ভুলবশত অন্য একটি ছবি চলে এসেছিল, যা গোচরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আন্তরিকভাবে দুঃখিত]