নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহে ভাঙনে এই গ্রামের ২০৫টি ঘরবাড়ি, অন্তত ৭০ একর আবাদি জমি ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও শতাধিক ঘরবাড়ি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে।
আশ্রয়হারা মানুষ স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কলমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্নময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে নদীভাঙা মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। কেউ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ গাছ কেটে নিচ্ছেন, কেউ নদী থেকে দুরে নতুন করে একচালা ঘর তুলছেন। অনেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
একই গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের (৫২) বলেন, “সাতদিনের ব্যবধানে আমার পাঁচবিঘা জমির ভুট্টা নদীতে চলে গেছে। একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে নদী ভাঙনের ভয়। আমরা খুব বিপদে আছি।”
জোবেদা বেগম (৪২) বলেন, “নদী হামারঘরে সবকিচু কাড়ি নিচে। এ্যাকনা ঘর আচিলো, তাও তিনদিন আগোত নদীত চলি গেচে। বেটির বাড়িত থাকপ্যার নাগচি।”
গ্রামের পুরোহিত প্রতাপ চক্রবর্ত্তী বলেন, এক সপ্তাহে তাদের তিনটি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অন্য ঘরগুলোও ভাঙনের মুখে।
কামারজানি বন্দরের ব্যবসায়ী ও গোঘাট গ্রামের বাসিন্দা তাপস কুমার সাহা বলেন, তার চারটি ঘর ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনের মুখে থাকা প্রদীপ কুমার সাহা (৫৫) ও গৌতম সাহা (৫০) বলেন, গত সাতদিন যাবৎ ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের শব্দে রাতে ঘুমানো যায় না।
প্রদীপ বলেন, “কিন্তু এখানে কোনো জিও ব্যাগ ফেলান হচ্ছে না। প্রতিদিন অবিরাম জিও ব্যাগ ফেললে ভাঙন কিছুটা ঠেকানো যেত।”
কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৬-৭ ফুট পরিমাণ এলাকা ভাঙছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই মাসের শুরু থেকে ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম গোঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ১২দিন ধরে এই ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যেই ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে প্রায় আড়াইশ বছরের দুর্গা মন্দির, ২০৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি, ভিটে মাটি সব বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলছে বললেও তা যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করেন।
কামারজানির গোঘাট থেকে সংলগ্ন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর, লালচামার, কাপাসিয়া ও ছয়ঘড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন ঠেকাতে সিসি ব্লক দিয়ে তীর সংরক্ষণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান আরও জানান, ইতোমধ্যে একনেকে এ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এজন্য নতুন করে ৪০২ কোটি টাকা বরাদ্দ
দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু হলে গোঘাটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।