জয়পুরহাটে ৬ কিলোমিটার রাস্তার ভোগান্তি আর ফুরায় না

জয়পুরহাটের সদর ও কালাই উপজেলার ছয় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় দীর্ঘদিন উন্নয়ন কাজ হয়নি। বর্ষা মৌসুমে সেই সড়ক ভিজে কাদায় একাকার হয়ে থাকে; বেহাল সড়কে পথ চলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ওই এলাকার লোকজনদের।

জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2020, 05:48 AM
Updated : 17 August 2020, 06:24 AM

সদরের আমদই ইউপি চেয়ারম্যান শাহানুর রহমান সাবু জানান, তার ইউনিয়নের রাংতা মোড় থেকে পাইকড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার কাঁচারাস্তার পাশ্ববর্তী সাতটিরও বেশি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয়।

একই অবস্থা কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের তেলিহার, ভাটাহার ও পাইকপাড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার কাঁচারাস্তার পাশের প্রায় ১০টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের- জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াজেদ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাঁচারাস্তাগুলোর এলাকায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, কয়েকটি আদর্শ গুচ্ছগ্রামসহ নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও হাট বাজার রয়েছে। বর্ষা মৌসূমে কাঁচামাটির রাস্তায় কাঁদায় একাকার হয়ে পড়ায় কোনো ধরনের যান চলাচল করতে পারছে না। ফলে কৃষকরা ধান-চালসহ তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রির জন্য নিতে পারেছেন না।

কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এলাকার পরিবহন চালকরা। অনেক সময় মুমূর্ষ রোগীদেরও নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না হাসপাতালে। এই কাদামাটির রাস্তায় চলতে গিয়ে লোকজনের পায়ে ঘা সৃষ্টিসহ নানা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।

সদর উপজেলার রাংতা গ্রামের আব্দুস সামাদ বলেন, “বৃটিশ শাসনামলেরও অনেক আগে থেকে এই এলাকাগুলোতে জনবসতি গড়ে উঠলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা কোন কালেই ভালো ছিল না।স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এসব এলাকায় মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়।“

পাইকপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিন বলেন, “এসব এলাকায় এঁটেল মাটি হওয়ায় বর্ষার সময়ে রাস্তাগুলোতে এক দেড় ফুট আঠালো কাদার সৃষ্টি হয়। ফলে রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে। “

একই আক্ষেপের কথা জানালেন কালাই উপজেলার তেলিহার গ্রামের মজিবর, সামছের আলী ও ভাটহার গ্রামের ছানায়ার হোসেন। 

ভাটাহার গ্রামের আজাহার বলেন, বর্ষার সময় এই এলাকার রাস্তায় এক দেড় ফুট পিচ্ছিল কাদা হয় বলে কৃষকেরা ফসল বিক্রি করতে যেতে পারেন না। ভ্যান, রিকশা কোন কিছু রাস্তায় বের হতে পারে না। ভাঙা রাস্তার কালে বেশ কয়েকটি বাড়ির  মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হয়েও তা ভেস্তে গেছে।”

একই এলাকার অটোরিকশা চালক মোনোয়ার মণ্ডল বলেন, “আমি রাস্তার কারণে গাড়ি চালাতে পারিনা। ইনকাম নেই বলে চাল-ডালও কিনতে পারি না। বৌ-বাচ্চা লিয়ে খুব কষ্টে আছি।”

ভাটাহার গ্রামের তহমিনা ও ছানোয়ার হোসেন জানান, রাস্তার বোল দশার কারণে বর্ষার সময় বৃদ্ধ, রোগী ও গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে বা বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নেওয়া যায় না। এমন পরিস্তিতিতে কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

রাংতা গ্রামের মজনুর রহমান বলেন, “বর্ষার সময় লোকজন ধান-চাল,শাক-সবজিসহ উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে যেতে পারে না। ফলে অর্থের অভাবে অনেককে পরিবার-পরিজন নিয়ে  অনাহারে থাকতে হয়।”

রায়হান আলীসহ অনেকে বলেন,“এ সময় নিতান্ত প্রয়োজনে যাদের ঘর থেকে বের হতে হয়,তাদের পায়ের আঙ্গুলে ঘা হয়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমদই ইউপি চেয়ারম্যান শাহানুর রহমান সাবু ও উদয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াজেদ বলেন, রাস্তাগুলো পাকা করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে জয়পুরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এফ এম খায়রুল ইসলাম বলেন, “জেলায় প্রায় ১ হাজার ৮৮৩ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। তার মধ্যে ৮২২ কিলোমিটার পাকা হয়েছে; বাকি ৯৫৭ কিলোমিটার এখনও কাঁচা। আমাদের জেলার যতটুকু রাস্তার নির্মাণ কাজ বাকি আছে সেগুলোর দ্রুত সারাতে করতে বলা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।”

শুধু জয়পুরহাট সদর উপজেলার রাংতা-পাইকর সড়ক বা কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের তেলিহার, ভাটাহার ও পাইকপাড়া সড়কই নয়। এমন কাঁচা রাস্তা জেলায় আও রয়েছে বলে খায়রুল জানান।