যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র: সহকারী পরিচালক বরখাস্ত, মামলা দায়ের

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে এবং কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2020, 05:13 PM
Updated : 14 August 2020, 08:33 PM

এছাড়া এই ঘটনা তদন্তে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাটে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়, আহত হয় আরও অন্তত ১৫ জন।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের বরাতে পুলিশ প্রথমে বন্দি কিশোরদের ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষে’ হতাহতের এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছিল।

কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহত কিশোরদের অভিযোগ, কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দফায় দফায় মারধর করে, তাতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হতাহতের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।  

তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের কমিটিতে আছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, একজন সহকারী পুলিশ সুপার ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের দুই সদস্যের কমিটিতে আছেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) যুগ্মসচিব সৈয়দ মো. নূরুল বাসির ও উপপরিচালক এএম মাহমুদুল্লাহ।

এদিকে, নিহত তিন কিশোরের একজন পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া এই ঘটনায় শুক্রবার রাতে যশোর কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন।

যশোর কোতয়ালি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এক নিহতের বাবা রোকা মিয়া শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৩৫।

রোকা মিয়া খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বর পাশার মানিকতলার বাসিন্দা।

এদিকে, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের হতাহত ও অনেক কিশোরের স্বজনরা শুক্রবার সকাল থেকে হাসপাতাল ও কেন্দ্রে ভিড় জমান। টেলিভিশনের খবর দেখে তারা ছুটে এসেছেন বলে জানান। তারা এ ঘটনার জন্য শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন।

যশোরের পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ ১২ জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের মধ্যে কেন্দ্রের কয়েকজন কিশোরও রয়েছে।

পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক খন্দকার মহিদ উদ্দিন শুক্রবার দুপুরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে, শুক্রবার সকালে আহত আরেকজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রূপক নামের এ কিশোর বগুড়া সদর উপজেলার সুজাবাদের সোহেল হোসেনের ছেলে। এ নিয়ে আহতের সংখ্যা হলো ১৫।

নিহত তিন জনের ময়নাতদন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। পরে স্বজনদের লাশ হস্তান্তর করা হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে রাত ৮টার মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তিনটি মরদেহ আসে। এরপর রাত সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ১৪ জন আহত কিশোরকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকালে আনা হয় আহত আরেক কিশোরকে।

নিহতরা হলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ছোলিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরামানিকের ছেলে নাইম হাসান (১৭), খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা দক্ষিণপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান (১৮) ও বগুড়ার শেরপুরের মহিপুর গ্রামের নূরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা বন্দি কিশোরদের দুই দলের সংঘর্ষ বলছে। তবে আহত কিশোরদের ভাষ্য, কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে কেন্দ্র কর্মকর্তা, আনসার সদস্য ও তাদের ‘অনুগামী’ কয়েকজন কিশোরের মারপিটে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহা পরিদর্শক একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, “সংঘর্ষ নয়, এক পক্ষের হামলায় এ ঘটনা ঘটেছে। আহত কিশোরদের কথাই সত্য।”

 বালকদের জন্য দেশে দুটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। এর একটি গাজীপুরের টঙ্গিতে, অন্যটি যশোর শহরতলির পুলেরহাটে।

যশোর কেন্দ্রে মোট বন্দির সংখ্যা ২৮০ জন বলে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

যশোরের এ কেন্দ্রে লাশ উদ্ধার ও মারধরের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। দায়িত্বে অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সুপারিশও করেছিল।