শুক্রবার আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় দৃর্বৃত্তরা বিষ দিয়ে এই বিপুল সংখ্যক মাছ মেরেছে বলে দাবি করেছেন ‘প্রাণ প্রকৃতি এগ্রো’র খামারিরা; অন্যদিকে মৎস্য কর্মকর্তা মাছের সঠিক পরিচর্যার অভাব ও খাবারের বিষক্রিয়াকে সম্ভাব্য কারণ ভাবছেন। তবে বিষ মেশানোর আশঙ্কাও তিনি একেবারে বাতিলও করেননি।
জিরাবোর দেওয়ান ইদ্রিস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকার এ খামার পরিদর্শন করে মাছগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রাথমিকভাবে পানিতে বিষক্রিয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তবে খাবারের বিষক্রিয়ায় মাছ মারা যাওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস এবং পিএইচ বা পানির ক্ষারীয় অনুপাত বেড়ে যাওয়ার উপস্থিতি পানিতে দেখা গেছে।
“প্রাথমিকভাবে প্যারামিটারে পরীক্ষায় আমরা জানতে পেরেছি, ক্ষতিগ্রস্ত এ খামারের পানিতে অক্সিজেন থাকার কথা পাঁচ পিপিএম কিন্তু সেখানে আছে দুই পিপিএম। আবার অ্যামোনিয়া গ্যাস থাকার কথা ০.০৫ থেকে ০.১ শতাংশ পর্যন্ত; কিন্তু সেখানে রয়েছে ০.৫০ শতাংশ; যা অনেক বেশি।”
মাছের ঘনত্ব বেশি হলে এবং বেশি পরিমাণ খাবার দিলে জলাশয়ের নিচে জমে বিষাক্ত গ্যাস অ্যামোনিয়া তৈরি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেখানে পানির পিএইচ ৭.৫ থেকে ৮.৫ থাকার কথা, সেখানে এ খামারে ৯.২০ পাওয়া গেছে। যা অনেক বেশি।“
তিনি বলেন, “একটি হতে পারে কেউ হয়তো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মাছের খাবারে বিষ মিশিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মাছের অতিরিক্ত খাবার পানির নিচে জমে গিয়ে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়। ফলে মাছ সে খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে।
“আবার পুকুরে ধারণ ক্ষমতার বেশি মাছ থাকলে সেই মাছের পায়খানা জমেও অ্যামোনিয়া গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে মাছ মারা যেতে পারে।”
তবে পানিতে বিষ মেশানোর কোনো আলামত পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পানিতে বিষের কোনো গন্ধ পাওয়া যায়নি। পানিতে বিষ মেশালে আশেপাশের মাছের খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হতো।”
তবে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা।
“এই মাছ কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। যদি বিষক্রিয়া হয়ে মাছ মারা যায়, তাহলে মানুষ খেলেও তার শরীরে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা থাকবে।”
অন্যদিকে, এ খামার মালিক শরিফুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম দুই ভাই সন্দেহ করছেন দুর্বৃত্তরা তাদের খামারে বিষ দিয়েছে।
প্রায় ৪০ বিঘা জায়গা জুড়ে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসা এই খামারিরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে হঠাৎ ২/১টা মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। শুক্রবার সকাল থেকে লোকজন নিয়ে কয়েকশ মণ মরা বড় বড় রুই, কাতল মাছ পানি থেকে তুলেছেন।
এ খামারে প্রায় ১০ বছরের পুরোনো মাছও ছিল। পানির নিচেও অনেক মাছ মরে পড়ে রয়েছে বললেন তারা।
ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দুর্বৃত্তরা বিষ দিয়ে খামারের মাছ মেরেছে দাবি করে দোষীদের শাস্তি চান তারা।
দেশের অন্য অনেক এলাকার মতো ঢাকার এ অঞ্চলেও খামারে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলার অতীত ঘটনা রয়েছে।
২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রয়ারি রাতে দুর্বৃত্তরা পৌর এলাকার ভাটপাড়া মহল্লার আবুল কাশেমের পুকুরে বহু মাছ মারা যায়।
সে সময় মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেছিলেন, তার পুকুরে রুই, কাতলা, নলা, মৃগেল তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের ১০ লাখ টাকা পোনা ছেড়েছিলেন। সব মাছ মরে ভেসে ওঠে।
২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ভোরে আশুলিয়ার আউকপাড়া গ্রামে মৎস্য ব্যবসায়ী সুমন রানার পুকুরেরও অনেক মাছ মারা গেছে।
ওই পুকুরের দেশি জাতের রুই, গ্লাস কার্প, পুটি, মিড়কা, টেংরা, সিলভার কার্প, কাতলাসহ প্রায় ৩৫ মণ মাছ মরে যায় বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর ভাষ্য।
২০১৫ সালের ১৯ অগাস্টের রাতে বিষক্রিয়ায় তিন মৎস্য ব্যবসায়ী সাভারের রাজফুলবাড়ীয়ার আলতাফ হোসেন, মো. সেলিম ও জালাল উদ্দিনের পুকুরের নলা, রুই, কাতল, সিলভারকাপসহ প্রায় ১৮ লাখ টাকার মাছ মারা যায়।