ফরিদপুরের কবি এম এ হকের প্রতি শ্রদ্ধা

ফরিদপুরের কবি এম এ হকের ১৪তম মৃত্যুদিবসে তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষী-শুভানুধ্যায়ীরা।

শেখ মফিজুর রহমান শিপন ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 10:13 AM
Updated : 13 August 2020, 10:13 AM

এলাকায় ‘কবিরত্ন এম এ হক’ ও ‘কবি সাহেব’ নামে পরিচিত এই কবির জন্ম ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ব্যাংকেরচর গ্রামে ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি। শিক্ষকতা পেশায় দীর্ঘকাল নিয়োজিত থেকে ২০০৬ সালের ১৩ অগাস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

আলফাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদ হাসান বাহার বলেন, কবি হক আজীবন প্রত্যন্ত মধুমতীর তীরে বাস করে গ্রামকে সমৃদ্ধ করেছেন শিক্ষায়, সমাজসেবায় এবং সাহিত্যে। বাংলাদেশে অঞ্চলিক ইতিহাসকে গুরুত্ব দেওয়ার রেওয়াজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই এম এ হকের মত গুণীজন অল্পদিনেই এলাকার মানুষের মন থেকে হারিয়ে যায়। শিশুদের অন্তরে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের নজির স্থাপনের জন্য সব এলাকার গুণীজনকে স্মরণ, মূল্যায়ন করা জরুরি।

“অন্তত সেই হিসেবে এ এলাকায় কবি হক এক উজ্জ্বলতম ব্যক্তিত্ব। আদর্শ, নীতি, শিক্ষা, সাহিত্য আর সমাজ সংস্কারকের প্রতিশব্দ তিনি। তিনি ব্যবসা নয়, চাকরি নয়, একপ্রকার সংসারবিমুখী হয়ে পেশা ও নেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা এবং সাহিত্যসাধনা। তিনি প্রায়ই বলতেন, একমাত্র সাহিত্যচর্চার জন্যই তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।”

কবি হক আজীবন একটা আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন। আর সেজন্য তিনি মানুষকে শিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন আজীবন।

কবি হক ছিলেন কুসংস্কারমুক্ত আধুনিক শিক্ষায় একজন শিক্ষিত মানুষ। শিক্ষকতা ছাড়াও হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথিতে গ্রাম্য ডাক্তার হিসেবে মানুষের সেবা করে সুনাম কুড়িয়েছেন।

কবির ছেলে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, “প্রতিভা বিকাশের জন্য অথবা প্রতিভা-পরিচিতির জন্য প্রতিভাবানের ভৌগোলিক অবস্থান হয়ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু তা একটি সাময়িক ব্যাপার। প্রতিভার কোনো দেশ-প্রদেশ নেই।

“ভূগোলের বিবেচনায় কবি হকের নিবাস নিঃসন্দেহে প্রান্ত; যাকে বলে প্রত্যন্ত অঞ্চল। কিন্তু সেই প্রান্ত থেকেই তিনি কেন্দ্রের ভাবকে লালন করে, আবার প্রান্তের ভাবকে কেন্দ্রে তুলে ধরে কেন্দ্র ও প্রান্তের ভেদ ঘোচাতে চেষ্টা করেছেন।”

কবির সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিয়ে কুদরত-ই-হুদা বলেন, স্থানীয় কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি থেকে ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে তিনি খুলনায় বিএল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫০ সালে আইএ পাস করে শিক্ষকতা শুরু করেন।

“এলাকায় তিনি যুক্তিবাদী, পণ্ডিত, শিক্ষানুরাগী এবং কবি সাহেব নামে পরিচিত। তিনি একাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। জীবনে বহুবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং গুণিজন হিসেবে সংবর্ধিত হয়েছিলেন। কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘যশোর-সাহিত্য-সংঘ’ তাকে ‘কবিরত্ন’ উপাধি দেয়।”

হুদা বলেন, এম এ হক ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার এবং গল্পকার।

“তিনি লোকজীবনের অন্তরতল যেমন তার সাহিত্যের উপজীব্য করেছিলেন, তেমনি আধুনিকতাও উপলব্ধির আওতায় আনতে পেরেছিলেন। ইসলামি গান, লোকগান, আধুনিক গান ও কবিতার সফল পাশাপাশি অবস্থান তার প্রতিভার বৈচিত্র্য প্রকাশিত করেছে।”

‘যশোরের লোক কবি’ ও ‘ফরিদপুরের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে তার কবিতা ও জীবনী গ্রন্থিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ সম্পাদিত এবং সাবেক বাংলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কবি পরিতিচিতি’ গ্রন্থে কবি হকের নাতিদীর্ঘ জীবনী গ্রন্থিত হয়।

“বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘চরিতাভিধানে’ তার জীবন ও কৃতিত্ব ভুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”

কবি হকের গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পথ দিশারু’, ‘শুকতারা’, ‘কাঙ্গাল পথিক’, ‘মুক্তির গান’, ‘কচি মনের খোরাক’, ‘দাদুর ছড়া’, ‘ছন্দ-বন্ধ-বাগধারা, ইত্যাদি। গ্রন্থগুলোর অধিকাংশ কবিতা আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে রচিত।