কুড়িগ্রামে বন্যাকবলিত এলাকায় বাড়ছে রোগ-বালাই

কুড়িগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। মানুষের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2020, 09:04 AM
Updated : 10 August 2020, 09:32 AM

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করার পর থেকে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষদের হাত, পা ও আঙ্গুল ফেটে যাচ্ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে নানান জটিল রোগ।

তিনি বলেন, “চলতি বন্যায় জেলার নয়টি উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৭৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। জলবন্দি, নদীভাঙন ও পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখ। বন্যায় প্রায় ৬৩ হাজার বাড়িঘর পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে শতশত গবাদিপশু। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৭টি। বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে ২৩ জন; এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৮।

“এরই মধ্যে লোকজন রোগব্যাধি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পরেছে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা-সহায়তা মিলছে না। তার উপর মানুষের হাতে কাজ নেই; ফলে হাতে নেই টাকা পয়সা। এতে করে ঘরবাড়ি মেরামত করা, ভেঙে পড়া নলকূপ ও বাথরুম সংষ্কার নিয়ে লোকজন বিপাকে পড়েছে। এই অবস্থায় সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলেও তা অপ্রতুল। এখনও মানুষ নিজেদের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গবাদিপশু খাদ্য সংকটে ভুগছে।”

এদিকে চলতি বন্যায় কুড়িগ্রামে ৩ হাজার ৮৯২টি গরু লাম্পি স্কিন রোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা ডা. মকবুল হোসেন জানান।  

জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপূত্র নদ পরিবেষ্ঠিত মশালের চরের ইউপি সদস্য সিদ্দিক আলী জানান, তার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫০টি পরিবারের প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে গরুর রোগ দেখা দিয়েছে।

পরে ওই এলাকায়  সরেজমিনে দেখা যায়- বেশিরভাগ গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও বাড়ির পুরুষ ও মহিলার হাত ও পায়ের চর্মরোগে এবং শিশুরা সর্দি, কাশি ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়েছে।

পাশের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্কর খান বলেন, “আমার বতুয়াতুলি ও ফকিরেরচর গ্রামে ১৯৭টি পরিবারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পরিবারে গরুর রোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও দেখা দিয়েছে নারী-পুরুষের চর্ম রোগ। প্রতিটি গরুর চিকিৎসা বাবদ আড়াই হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে। এতে কর্মহীন মানুষ দিশেহারা হয়ে পরেছে।” তাছাড়া চরগুলোতে ডাক্তার না থাকায় নৌকাভাড়া করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করতে অনেক ব্যয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মহু-বাদশা বলেন, “আমাদের চরাঞ্চলে সরকারি কোন পশু ডাক্তার আসে না। আমাদের বাড়তি ব্যয়ে নৌকা ভাড়া করে মোল্লারহাট বা যাত্রাপুরে গিয়ে গরুর চিকিৎসা করতে হয়। চরের সম্পদ হল গরু। এই গরু না থাকলে আমরা বাঁচবো কিভাবে। ”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মকবুল হোসেন জানান, লাম্পি স্কিন ডিজিজ মূলত ভাইরাল ডিজিজ। মশামাছি থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে গরু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে চিকিৎসায় অবহেলা করলে মারাও যেতে পারে।

তিনি বলেন, “এখনো যে সমস্ত চর এলাকায় আমাদের লোকজন যেতে পারে নাই। দ্রুত ত সেখানে ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বন্যাকালিন সময়ে গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য সরকার এবার ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ৯ লাখ টাকা উপবরাদ্দ ও বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আরও ৫ লক্ষ টাকা মজুদ রয়েছে।”

রোগবালাইয়ের বিস্তার নিয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমেনিয়াসহ অন্যান্য রোগের সেভাবে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। তবে আমাদের আশঙ্কা রয়েছে যে বন্যা পরবর্তীতে পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগগুলো বিস্তার লাভ করতে পারে। এজন্য ৮৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তত রয়েছে।