আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস: গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের বিক্ষোভ

চার বছর আগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতাল হত্যা ও তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2020, 06:33 PM
Updated : 9 August 2020, 06:33 PM

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে রোববার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকায় তারা এই কর্মসূচির আয়োজন করেন।

কর্মসূচি চলাকালে সাঁওতালরা তাদের পূর্বপুরুষের জমি ফেরতসহ তিন সাঁওতাল হত্যা ও তাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার বিচার দাবি করেন।

সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, এএলআরডি ও জনউদ্যোগ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে।

কিন্তু ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গ করা হচ্ছে অভিযোগ করে দখল ফিরে পেতে কয়েক বছর আগে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তারা সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে।

ওই বছর ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে চারজন সাঁওতাল তাতে আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদের ঘটনায় মুয়ালীপাড়া গ্রামের সমেস মরমুর ছেলে স্বপন মুরমু ওই বছর ১৬ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া ২৬ নভেম্বর ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল টমাস হেমব্রম আরেকটি মামলা করেন, যেখানে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।

ওই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই পিবিআই অভিযোগপত্র দেয়, যেখানে ৯০ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলার তদন্ত একসঙ্গে করে পিবিআই আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়।

কিন্তু অভিযোগপত্র থেকে এজাহারভুক্ত আসামিকে বাদ দেওয়ায় সাঁওতালরা ওইদিনই বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করে এর প্রতিবাদ জানায়।

সাঁওতালরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মাদারপুর-জয়পুর সাঁওতাল পল্লি থেকে ১৪ কিলোমিটার হেঁটে গোবিন্দগঞ্জ থানা মোড়ে গিয়ে মানববন্ধন করেন

প্রায় চার বছর আগের সেই ঘটনার বিচার তারা আজও পাননি বলে কর্মসূচিতে অভিযোগ তোলেন।

বিক্ষুব্ধ সাঁওতালরা গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর-জয়পুর সাঁওতাল পল্লি থেকে ১৪ কিলোমিটার হেঁটে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুন, পতাকাসহ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানা মোড়ে গিয়ে মানববন্ধন করেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ঘটনার প্রায় চার বছর হলেও তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেনি।

অভিযোগপত্র থেকে এজাহারভুক্ত আসামি গোবিন্দগঞ্জ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও প্রকাশ্যে সাঁওতালদের বাড়িঘরে ‘অগ্নিসংযোগকারী অতি উৎসাহী পুলিশসহ’ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের নাম বাদ দেওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে প্রকাশিত আগুন লাগানোর ফুটেজ, ছবি প্রকাশ পেলেও ‘সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে’ দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি বলেও তারা অভিযোগ করেন।

এর মাধ্যমে সাঁওতালদের সঙ্গে পরিহাস করা হয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ।

বর্তমানে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করছে উল্লেখ করে তারা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়ার দাবি জানান।  

করোনাভাইরাস মাহামারীর মধ্যে সাঁওতালদের জীবন-জীবিকা কঠিন হয়েছে উল্লেখ করে তাদের সহায়তার আহ্বান জানান বক্তারা।

মানববন্ধন চলাকালে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা সভাপতি মিহির ঘোষ, পরিবেশ আন্দোলনের আহবায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বাবু, কমিউনিস্ট পার্টি উপজেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সাঁওতাল হত্যার মামলার বাদী থমাস হেমব্রম, আদিবাসী নেত্রী তৃষ্ণা মুর্মু, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির নেতা স্বপন শেখ, গণেশ মুর্মু, রাফায়েল হাসদা প্রমুখ।