বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরাতে ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা এক খুনিকে ফেরত পাঠাতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2020, 01:43 PM
Updated : 7 August 2020, 01:45 PM

শুক্রবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

গত এপ্রিলে বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার ঘাতকদের মধ্যে এখনো ৫ জন জীবিত রয়েছে। প্রত্যাশা ছিল, মুজিববর্ষে দুজনকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। আল্লাহ মেহেরবান, একজনকে আমরা পেরেছি। আর আরেকজনকে আনা যাবে বলে আশা করছি।”

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা রাশেদ চৌধুরী এবং কানাডায় থাকা নূর চৌধুরীর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা দুজনকেই যাতে দেশে আনতে পারি, সেজন্য যা যা করা প্রয়োজন, স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিঠি লিখেছেন, ট্রাম্পকেও চিঠি লিখেছেন। আমরা আশা করতেছি যে আমরা সাসসেফুল হব।”

তবে কানাডা থেকে মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের ফেরত আনা যে কঠিন, সে কথাও বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি রাশেদ চৌধুরী

সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ছাড়া পেয়ে যায়।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার শেষে ২০১০ সালে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ গত এপ্রিলে পলাতক আবদুল মাজেদ ধরা পড়লে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়।

তবে দণ্ডিত পাঁচ খুনি এখনও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন, তাদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় হারাতে পারেন এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন দুপুরে টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে সেখানে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী সেলিনা মোমেন, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাঈদুর রহমান খান, ইউএনও নাকিব হাসান তরফদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব  আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বাশার খায়ের, সাবেক সভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ, উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, পৌর মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।