টুঙ্গিপাড়ার ‘হিসাব কর্মকর্তার’ কারণে ভোগান্তির অভিযোগ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ‘নিয়মিত অফিস না করায়’ প্রায় সাড়ে চারশ পেনশনভোগী ভোগান্তির শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2020, 11:19 AM
Updated : 7 August 2020, 11:19 AM

পেনশনভোগীদের অভিযোগ, পেনশনের টাকা তুলতে তাদের ওই অফিসে দিনের পর দিন ধরনা দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে পেনশনের টাকা না দিয়ে হয়রানি করা হয় তাদের। এক মাসের পেনশন অন্যমাসে দেওয়া হয়।

পেনশনভোগীদের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে দেওয়ার জন্য ডাটা এন্ট্রির কাজও চার মাসে করা সম্ভব হয়নি বলেও তারা অভিযোগ করেন।

তবে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস জানিয়েছে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে অবসরে যাওয়া প্রায় সাড়ে চারশ জন প্রতিমাসে এই অফিস থকে অবসরভাতা নেন।

টুঙ্গিপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ফরিদ আহম্মেদ বলেন, “আমরা যখনই পেনশনের টাকা তুলতে আসি সেদিন ওই কর্মকর্তা থাকেন না। দিনের পর দিন ঘুরেও তাকে অফিসে পাওয়া যায় না। এক মাসের পেনশন অন্য মাসে নিতে হয়। বার বার অফিসে আসতে হয়। এই বৃদ্ধ বয়সে ভোগান্তির শেষ নেই।”

কাস্টমস থেকে অবসরপ্রাপ্ত টুঙ্গিপাড়ার এমদাদুল হক বলেন,“ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ঠিকমতো অফিস করেন না। আর কখনও এলেওও নানা অজুহাত দেখান। তিনি ইচ্ছামতো অফিস করেন। এ কারণে তার মর্জির উপর পেনশন নিতে হয়।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের সব জায়গায় অবসরপ্রাপ্তদের ডাটা এন্ট্রির কাজ হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে হচ্ছে না। ওই কর্মকর্তা টাকা খাওয়ার জন্য আমাদের হয়রানি করছে।”

টুঙ্গিপাড়ার জি টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেকেন্দার আলী বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে তোলার জন্য অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করার আদেশ হয়েছে। অবসরপ্রাপ্তদের ডাটা এন্ট্রি করার জন্য হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান দুই মাস সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু ৩/৪ মাস পার হলেও তিনি ডাটা এন্ট্রির কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি।

“তিনি মাসে দুদিনও অফিস করেন না। বেশিরভাগ সময় ঢাকায় বসবাসরত পরিবারের সাথে থাকেন। কর্মকর্তা না থাকায় অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের টাকা তুলতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। ওই কর্মকর্তা উৎকোচের আশায় রয়েছেন। কিন্তু আমরা উৎকোচ দেইনি তাই ডাটাএন্ট্রির কাজ হচ্ছে না।”

নাম প্রকাশে না করার শর্তে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার এক কর্মকর্তা বলেন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিয়মিত অফিসে না আসায় বেতন-ভাতা তুলতে পারেননি। এছাড়া বিল-ভাউচার পাশ করতে দেরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান নিয়মিত অফিস করার দাবি করে বলেন, “নিয়মিত অফিস না করলে উপজেলার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বিল-ভাউচার কীভাবে হচ্ছে! তবে পরিবার ঢাকা থাকে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার একটু আগে চলে যাই। রোববার ঢাকা থেকে অফিসে আসতে একটু দেরি হয়। এতে অফিসের কাজের কোন ক্ষতি হয় না।”

তিনি বলেন, ভাতাভোগীদের ডাটা এন্ট্রির কাজ সার্ভারে সমস্যার কারণে করা হয়নি। উৎকোচের জন্য এটি বন্ধ রাখা হয়নি।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাকিব হাসান তরফদার বলেন, “মৌখিকভাবে আগেও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে অফিস করার ব্যাপরে সতর্ক করেছি। তাকে নিয়মিত অফিস করার জন্য বলেছি। ভাতাভোগীদের দুর্ভোগের কথা শুনেছি। দ্রুত এটি সুরাহা করা হবে।”