বৈরুত বিস্ফোরণ: বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মিজানুরের মা

অনেক কষ্টে জমানো কিছু টাকা আর ধারদেনা করে রোকসানা বেগম তিন বছর আগে তার বড় ছেলে মিজানুর রহমান খানকে পাঠিয়েছিলেন লেবাননে। বৈরুতের বিস্ফোরণ মাদারীপুরের এই পরিবারটির সব আশাও যেন মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। 

মাদারীপুর প্রতিনিধিরিপন চন্দ্র মল্লিক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2020, 06:25 AM
Updated : 6 August 2020, 06:47 AM

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বৈরুতের বন্দর এলাকায় বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদামে ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণে বড় একটি এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। নিহত হন অন্তত ১৩৫ জন, যাদের মধ্যে ২৫ বছর বয়সী মিজানুরসহ চারজন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে এ পর্যন্ত জানা গেছে।

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের কাজীকান্দি গ্রামে মিজানুরদের বাড়িতে তার মৃত্যুর খবর পৌঁছায় বুধবার। এরপর থেকে সেখানে চলছে শোকের মাতম। বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন তার মা।

ওই গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর খান আর রোকসানা বেগমের ছেলে মিজানুর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লেবাননের বৈরুতে গিয়ে একটি হোটেলে চাকরি নেন। তার পাঠানো টাকায় ধীরে ধীরে সংসরে সুখের দিন ফিরবে, এই আশায় ছিল পুরো পরিবার।

তিন ভাই ও এক বোনের সংসারে মিজানুর সবার বড়। তার নিজের স্ত্রী ও তিন বছরের একটি মেয়ে আছে। পরিবরের সবাই এখন শোকে স্তব্ধ।

মাদারীপুরের মিজানুর রহমান খান মারা গেছেন বৈরুত বিস্ফোরণে

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোকসানা বেগম একসময় ঢাকায় একটি কারখানায় চাকরি করতেন। সেখান থেকে কিছু টাকা জমিয়ে, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে এবং এক এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মোট ৬ লাখ টাকায় তিনি ছেলেকে লেবাননে পাঠিয়েছিলেন।

কারখানায় কাজ করার সময় এক দুর্ঘটনায় দুই হাতের ছয়টি আঙুল পুড়ে যায় রোকসানার। অসুস্থ অবস্থায় তিনি এখন গ্রামের বাড়িতেই থাকছেন। কৃষক জাহাঙ্গীরের সামান্য আয়ে এখন সংসার কীভাবে চলবে, কীভাবে ধার শোধ হবে- সেই দুঃশ্চিন্তা এখন গ্রাস করেছে পুরো পরিবারকে।

রোকসানা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার পোলায় কত আশা লইয়া গেছিলো লেবানন। সব কিছু শ্যাষ হইয়া গেল আমাগো। আল্লাহ। এ কী হইলো আমাগো। এত টাকা দেনা আমি এহন ক্যামনে দিমু।”

আর মিজানুরের বাবা জাহাঙ্গীর বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, “মঙ্গলবার রাত ৯টার আগে (বৈরুতে তখনও ৬টা বাজেনি) আমার সাথে শেষ কথা হয়েছে। কাল আমরা জানতে পারলাম মিজান বিস্ফোরণে মারা গেছে। আমার সন্তানের লাশ আপনারা দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন।”

কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম মৃধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওর পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতাসহ যত ধরনের সহযোগিতা লাগবে আমি তা করব। লাশ যাতে দ্রুত দেশে আনা যায়, সেজন্যও যোগাযোগ করব।”