যমুনায় সব হারিয়ে নৌকায় পেতেছে সংসার

বন্যা ও যমুনার ভাঙনে সব হারিয়ে হাসি রানীর সংসার এখন নৌকায়। স্বামী-সন্তান নিয়ে নৌকায় তাদের রান্না, খাওয়া, ঘুমানো সব কিছুই।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2020, 04:55 PM
Updated : 4 August 2020, 04:55 PM

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বৈশাখী চরে হাসি রানী, তার স্বামী হযরত আলী, ১৪ বছরের ছেলে হিমেল ও ছয় বছরের মেয়ে মাহিকে নিয়ে বাস করতেন।  বন্যা ও ভাঙন সব হারিয়ে এখন ভাসমান যাযাবর জীবন যাপন করছেন তারা।

যমুনার তীরে ভান্ডার বাড়ীর কালীতলা ঘাটে কথা হল হাসি রানীর সাথে। তার ছেলে ও মেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে খেলতে গেছে। স্বামী হযরত আলী নদীতে মাছ ধরতে গেছে। নৌকাতে থালা বাসন, পাতিল সাজানো। রান্না শেষে বসে স্বামীকে খাওয়ার জন্য ফোন করছিলেন তখন।

এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “নিজেই তো দেখছেন- নৌকায় এখন বাড়ি-ঘড়।”

কী রাঁধলেন জানতে চাইলে বলেন, “কী আর করমু, যা শাক পাতা পাই তাই রান্না করে কোনো রকম জীবন চালাই।”

সে সময় তার স্বামী হযরত আলী যমুনায় মাছ ধরছিলেন।

তিনি মোবাইল ফোনে জানান, বৈশাখীতে তার বাপ-দাদার ভিটে মাটি। পাঁচ বিঘা জমি আর চারটি ছাগল ছিল। ভালোই কাটছিল তাদের জীবন। ছেলেটা বৈশাখী নিম্ন মাধ্যমিকে  অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।  সেই স্কুলটিও যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষেতে পাট চাষ করেছিল-তাও নদীর মাঝে।

বৈশাখী চরে পলিথিনে ঘেরা ছোট্ট একটা ঠিকানায় রয়েছে তাদের চারটি ছাগল। যেকোনো সময় তা ভেঙে যাবার শঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, “স্ত্রী- সন্তানদের নিয়ে ছোট একটা নৌকাতে থাকি আমরা।

“যমুনায় জাল দিয়ে মাছ ধরি। মাছ বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছি।”

রাতে বৈশাখী চরের পাশে আর দিনের বেলা কখনও স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে কালিবাড়ী ঘাট, কখনও বড়ই তলী ঘাট, কখনওবা বানিয়াজান স্পারে থাকেন বলে জানান হযরত আলী।

এবার বন্যায় ১০ কেজি করে দুইবার ত্রাণের চাল পেয়েছে বলে তিনি জানান।

“শুনি বিভিন্নজন বৈশাখীর লোকদের ত্রাণ দেয়। তালিকা কে করে কারা পায় জানি না। তবে আমার মত অনেকেই পায় না। দালালদের লোকেরা পায়।”