এতিমখানা, হেফজোখানা ও কওমি মাদ্রাসার অর্থের বড় একটা যোগান আসে কোরবানির চামড়া বিক্রি থেকে। যশোরের ভুক্তভোগীরা বলছেন, বরাবরের মতো চামড়া পেলেও এবার দাম কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো।
যশোরের বাগআচড়া হেফজোখানার তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা খায়রুল বাসার জানান, তাদের দরিদ্র, অসহায়, এতিম শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়।
বছরের তিন থেকে চার মাসের ব্যয়ের অর্থ কোরবানির চামড়া বিক্রি থেকে আসত জানিয়ে তিনি বলেন, এবার চামড়ার দাম কম হওয়ায় সেটা সম্ভব হবে না।
“শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।”
সামটা মুসলিম এতিমখানার সভাপতি লিয়াকত আলি জানান, চামড়ার দাম কম হওয়ায় এতিমখানার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
“চামড়া থেকে আসা অর্থ দরিদ্র, অসহায়, এতিম শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া ও লেখাপড়ায় ব্যয় করা হতো। এবার হয়তো সেটা আর হবে না।”
বেনাপোল চেকপোস্টের বাগে জান্নাত কওমি মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হামিদ বলেন, এটা হয়তো খুব বেশি বড় নয় কিন্তু তারপরও চামড়া বিক্রির খাত থেকে টাকা আসত।
এবার কোরবানি কম হওয়ায় চামড়া সংগ্রহও কমেছে এবং তারপরও সেটার দাম নেই বলেও জানান তিনি।
নাভারনের সিরামকাটি ওয়ালুম কওমি হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রধান আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, নাভারন কাজিরবেড় ও সিরামকাটি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের কোরবানির চামড়া তারা পেয়ে থাকেন।
“এবার গরুর চামড়া পেয়েছি ১১২টি আর খাসির ২০৫টি। বেচাবিক্রির চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো বেঁচতি পারিনি।”
জামতলা জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ মাওলানা হাফিজুর রহমান জানান, ধর্মীয় মতে কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ এবং চামড়া বিক্রির টাকা পুরোটাই গরিব মানুষের প্রাপ্য।
উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামের ভিখারি সজ্জোত আলি (৯০) বলেন, চামড়ার কডা টাকা পাতাম, তাও পালাম না। কচ্ছে চামড়া বিক্রি নেই।
বালুন্ডা হাইস্কুলের শিক্ষক মিজানুর রহমান কোরবানির ছাগলের চামড়ার ক্রেতা না পেয়ে মাটিতে পুতে ফেলেছেন।
শার্শার বালুন্ডা বাজারের মাংস বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম কোরবানি ঈদে গ্রাম থেকে চামড়া কিনে থাকেন। এবারও কিনেছেন তবে সতর্কতার সাথে বলে জানালেন তিনি।
এবার ৮৩টি গরুরসহ ১৬০টি চামড়া কেনার পর রেজাউল ইসলাম বলেন, গরুর চামড়া প্রতিটি ৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিছি। ছাগলের চামড়া কিনিছি ১৫/২০ টাকায়। কিছু চামড়া লোক দেছে 'বিক্রি করতি পারলি তারা টাকা পাবে' এই শর্তে।
উপজেলার নাভারন বাজারে চামড়া বেচাকেনা করেন মির্জাপুর গ্রামের শফিউর রহমান এবং দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের চঞ্চল হোসেন।
‘ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিচ্ছে না’ শুনে তারা চামড়া কেনার সাহস হারিয়েছেন। বড় গরুর চামড়া এক-দেড়শ টাকা দুইশ টাকায় কিনছেন। ছাগলের চামড়ার দাম ২০ টাকার উপরে কেনেননি। অনেকে ছাগলের চামড়া ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।