ঢাকা রক্ষা বাঁধের স্থায়ী সংস্কার দাবি

ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ঢাকা রক্ষা বাঁধের স্থায়ী সংস্কার চান স্থানীয়রা।

আসাদুজ্জামান সুমন কেরানীগঞ্জ-দোহার-নবাবগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2020, 02:56 PM
Updated : 2 August 2020, 04:00 PM

১৪.১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধে প্রতিবছর জরুরি ভিত্তিতে স্থানে স্থানে মাটি দিয়ে মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকার লোকজন। তারা পুরো বাঁধে সিমেন্টের স্ল্যাব বসানোর দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ বাঁধের জরুরি সংস্কার কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছে বললেও বড় ধরনের বরাদ্দের অভাবে স্থায়ী কোনো কাজে হাত দিতে পারেনি বলে জানায়। তবে আগামী শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হবে বলে জানানো হয়।  

স্থানীয়ভাবে কাশিয়াখালি বেড়ি বাঁধ নামে পরিচিত এই বাঁধে পানির চাপ স্বাভাবিক রাখতে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তিতপালদিয়ায় বাঁধের একমাত্র স্লুইচ গেট বসানো হয়েছে।

স্লুইস গেট দিয়ে প্রবল বেগে পানি বাধের পূর্বাংশে প্রবেশ করছে

বাঁধের পূর্ব পাশে রয়েছে ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলাসহ রাজধানী ঢাকা। পদ্মার পানি বাড়লে পূর্বপাশের এলাকাকে রক্ষায় এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে বাঁধে একাধিক স্লুইচ গেট থাকলে বর্ষায় বাঁধে পানির চাপ কমত বলে এলাবাসীর ভাষ্য।  

বাঁধ বা স্লুইস গেট ধসে গেলে ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলাসহ রাজধানী ঢাকার নিম্নাঞ্চলের বিরাট এলাকা প্লাবিত হবে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের পশ্চিম পাশে (যে পাশে পদ্মার পানি রয়েছে) বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ফাটল ধরেছে। স্লুইচ গেটের পাড়েও মাটি ধসে যাচ্ছে। ধস ও ফাটলের স্থানে কয়েকজন শ্রমিক বালু ভরতি ব্যাগ ফেলে সংস্কারের কাজ করছেন।

সুজন নামে এক শ্রমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুরো বাঁধের বিভিন্ন অংশে সংস্কার কাজের জন্য ‘গ্রুপ’ ভাগ করা আছে। তিতপালদিয়ার স্লুইচ গেট ও আশপাশের কিছু অংশ মেরামতে তারা চারজন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। প্রতিজনের দৈনিক ছয়শ টাকা মজুরিতে।

বাঁধের জরুরি সংস্কারে পশ্চিম পাশে বালু ভরতি ব্যাগ বসানো হয়েছে

“নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুদের মাধ্যমে আমরা মজুরি পাই।”

নবাবগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তিতপালদিয়া গ্রামের বাসিন্দা রনজিৎ হালদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে পানি এলেই এ বাঁধ নিয়ে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। অথচ পানি সড়ে গেলে বা শুকনো মৌসুমে কেউ আর এ বাঁধের খবর রাখে না। পুরো বাঁধে একটিমাত্র স্লুইচ গেট রয়েছে।

“সম্পূর্ণ বাঁধের পশ্চিম পাশের পানি এ গেট দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছরই হুমকির মুখে পড়ে স্লুইস গেটসহ পুরো বাঁধটি। পানির প্রচণ্ড চাপে এটি যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে।”

তিনি আরও জানান, এবছরও পানির চাপে পুরো বাঁধ ও গেটের বিভিন্ন অংশের পাড়ের মাটি ধসে যাচ্ছে। সেজন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু ভরতি ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করছে শ্রমিকরা। ইতিমধ্যে স্লুইচ গেটের উপরের সড়ক দিয়ে সব ধরনের ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশ টহলের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া পুরো রাত পাহারায় থাকছেন গ্রাম পুলিশের সদস্যরা।

জরুরি সংস্কার কাজের জন্য বাল জিও ব্যাগে বালু ভরতি করা হয়

“মাটির এ বাঁধের পুরো অংশে সিমেন্টের স্ল্যাব বসালে বাঁধটি স্থায়ীভাবে সুরক্ষিত হবে। তাই বাঁধটি রক্ষা করতে হলে স্ল্যাব বসাতে হবে।”

বৃহত্তর ঢাকা নগরী বন্যা নিয়ন্ত্রণ উপ-বিভাগ-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান মিশুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওখানে কিছু ‘রেইনকাট’ আছে এবং জায়গায় জায়গায় মানুষ চলাচলের পথ করাতে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে।

“সেই জায়গাগুলোতে আমাদের ইমার্জেন্সি কাজ চলছে। বর্ষার এ বছর স্লুইচ গেটের একটি ব্লক সরে গেছে। ইতিমধ্যে আমরা ব্লক বসিয়ে দিয়েছি এবং স্লুইচ গেটের যে যে অংশে মাটি সরে বা ধসে যাচ্ছে সে সকল অংশে  বালু ভরতি বস্তা ডাম্পিং করার কাজ প্রতিনিয়তই চলছে।

“এছাড়া বাঁধের যে সেকল স্থান আমাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে সে সকল স্থানেও ইর্মাজেন্সি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছি।”

স্থানীয়দের অভিযোগ হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ও স্লুইচ গেট নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে সবাই; কিন্তু বর্ষা শেষ হলে এবং পানি সরে গেলে কেউ আর খবর রাখে না।

স্লুইস গেটের পশ্চিম পাশে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে বালু ভরতি ব্যাগ বসানো হচ্ছে

বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান মিশুক বলেন, “বিষয়টি আসলে তা না। বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লে আমরা ইর্মাজেন্সি কাজ করার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে সরকারি ফান্ডের একটি ব্যাপার থাকে। কারণ সব সময় তো ফান্ড পাওয়া যায় না। আমরা প্রতিবছরই এ বাঁধ সংস্কারের জন্য ইমার্জেন্সি ফান্ড চাইলে সরকার দেয়; কিন্তু বড় রকমের কোনো কাজের জন্য কোনো ফান্ড পাচ্ছি না।”

তবে এ বছরের বাজেটে ঢাকা রক্ষা বাঁধে একটি বড় রকমের কাজ করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এজন্য আমরা একটি এস্টিমেট করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাইব। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ইনশাআল্লাহ্ কাজ করা সম্ভব হবে।”

এই বরাদ্দের বিষয়ে ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি সহায়তা করা আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান প্রকৌশলী মিশুক।