বগুড়ায় ‘দুইশ টাকাতেও কিনেছে’ কোরবানির চামড়া

বগুড়ায় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম সরকার নির্ধারিত দরের ধারে কাছে যায়নি, দুইশ টাকাতেও একটা গরুর চামড়া কিনেছে আড়তদাররা।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2020, 04:58 PM
Updated : 1 August 2020, 06:27 PM

শনিবার ঈদের দিন জেলার গ্রামাঞ্চলে ঘুর ঘুরে কম মূল্যে চামড়া কিনেও বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান হওয়ার দাবি করেছেন কেউ কেউ।

কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির সরকারি সিদ্ধান্তের পরও কোরবানির পশুর চামড়া সস্তা বিক্রি হতে দেখা গেল।

চামড়ার চাহিদা-যোগানে ভারসাম্য রাখতে গত বুধবার কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার আগে ২৬ জুলাই চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় তারা; যা ছিল আগের বছরের তুলনায় কম।

সরকারি সিদ্ধান্তে, এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকায় কিনবে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া বর্গফুটে ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকায় সংগ্রহ করবে ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহীতে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা। ছবি- গুলবার আলী জুয়েল

সে সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন,আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যর চাহিদা এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চাহিদা কেমন হতে পারে, তার সঙ্গে বর্তমান মজুদ বিবেচনা করে এবারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে, ঈদের দিন বগুড়ার সারিয়াকান্দীর বোহাইল ইউনিয়নের আজম আলী জানান, তারা এক সমাজে চারটি গরু কোরবানি দিয়েছিলেন। চারটি গরুর চামড়া এক হাজার ৬শ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনটি খাসির চামড়া ‘ফ্রি’ দিতে হয়েছে।

ধুনট উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামের রাবিন সরকার তার এক লাখ ২০ হাজার টাকা দামের গরুটির চামড়া বিক্রি করেছে পাঁচশ টাকায়।

ওই গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনজন মিলে ৯৮ হাজার টাকার গরু কোরবানি দিয়েছিলাম। চামড়া বিক্রি করেছি ৪শ টাকায়।

একটি গরুর চামড়া ১৬ থেকে ৩০-৩২ বর্গফুটের মতো হয় বলে থাকেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। দেশে গড়ে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া গরুর চামড়ার আয়তন ২০ থেকে ৩০ বর্গফুটের মধ্যে।

রাজশাহীতে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা। ছবি- গুলবার আলী জুয়েল

গোসাইবাড়ীতে চামড়া বিক্রি করতে আসা সারিয়াকান্দীর দড়িপাড়া গ্রামের কালু জানান, গ্রামে গ্রামে ঘুড়ে ৩০টি গরুর চামড়া গড়ে ৪শ টাকা দরে কিনেছিলেন। ছাগলের চামড়া গড়ে ২০ টাকায় কিনেছিলেন।

“কিন্তু ক্রেতা কিনতে চায় না। তাই সব মিলে বিক্রি করলাম। লোকসান হয়েছে এক হাজার টাকা।“

ধুনটের গোসাইবাড়ীর চামড়া ক্রেতা শাহ জামাল বলেন, “আমরা কাঁচামাল বিক্রি করলে সেই টাকা পেতে বছর লেগে যায়। তাই কেউ চামড়া বিক্রি করতে এলে কী দামে কিনব বলি। ইচ্ছে হলে দেবে, না হলে অন্য জায়গায় বিক্রি করবে।

এই গোসাইবাড়ীর অপর গরুর চামড়া ব্যবসায়ী সামিউল হাসান রনি জানান, এবার গরুর একেকটি চামড়া ২শ থেকে ৬শ পরযন্ত দামে কিনেছেন তিনি।

বিভিন্ন মানের চামড়ার কথা উল্লেখ করে রনি বলেন, লবণ ছাড়া ২৭/২৮ বর্গফুটের এক নম্বর একটা চামড়া ৬শ টাকা করেও কিনেছেন।

আর তিন নম্বর শ্রেণির খারাপ মানের লবণ ছাড়া চামড়া ২শ টাকা করেও কিনেছেন।  এমন চামড়া ২০ থেকে ২২ বর্গফুটের হলেও মানের কারণে দাম পাওয়া মুশকিল হয় বলে জানান তিনি।

রাজশাহীতে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা। ছবি- গুলবার আলী জুয়েল

চামড়ার দাম হওয়ার জন্য ট্যানারিগুলো বকেয়া পরিশোধ না করাকে কারণ বলছেন বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিন সরকার।

তিনি বলেন, “ট্যানারিগুলো বাকি টাকা কোরবানির ঈদের আগেও পরিশোধ করেনি। টাকা দিলে চামড়ার দাম সঠিক পেত।”

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে দেশ থেকে গড়ে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১ কোটির কিছু বেশি পশু কোরবানির জন্য সারাদেশে ব্যবহৃত হয়। এবার কোরবানির ঈদের জন্য সারা দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু মজুদ রয়েছে।