হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এ খাতকে ঘিরে উপার্জন নির্ভর ব্যবসায়ী ও কর্মীরা।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির হিসাবে এ বিভাগে পর্যটন খাতে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। আর গেল চার মাসে লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নবী চৌধুরী জুয়েল বলেন, “আমরা এক অনিশ্চিত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, ঠিক নেই। যদি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি মেলে, তবে এরপর অন্তত দেড়-দুই বছর সময় লাগবে পর্যটন খাত স্বাভাবিক হতে।”
এছাড়া মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মনিপুরি পাড়া, শ্রীমঙ্গল চা বাগানসহ রয়েছে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত সিলেটে গত এক দশকে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। তাই ছুটির দিনগুলোয় কোনো হোটেল-মোটেলে কক্ষ খালি পাওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে একেবারে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে এ খাত। সরকার ঘোষিত ‘সাধারণ ছুটি’ শেষে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য খাত সচল হতে শুরু করলেও পর্যটক নির্ভর সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোয় এখনও স্থবিরতা কাটেনি। স্বাভাবিক সময়ে পর্যটকে ভরপুর থাকে এসব হোটেল ও রেস্ট হাউজ। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যটক না থাকায় সব হোটেল, মোটেল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা পড়েছেন সমস্যায়।
“পর্যটন বলতে শুধু পর্যটনকেন্দ্রই নয়, এর সঙ্গে অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক খাত জড়িত রয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব খাত এখন চরম সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এ সংকটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পথে বসার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সিলেট অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে পর্যটন খাতে। গত চার মাসে এ ক্ষতির পরিমান ৪০০ কোটি টাকার মতো বলে শোয়েব জানান।
সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত সিলেটে প্রায় ২০০টি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। সংগঠনের বাইরেও রয়েছে অনেক হোটেল-রিসোর্ট।
অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাহমিন আহমদ বলেন, তিন মাস ধরে হোটেল-মোটেলে ব্যবসা নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। কেবল হোটেল নয়, পর্যটক নির্ভর করে সিলেটে অনেক রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের নৌকার মাঝি, পরিবহন সেক্টর, ট্যুরিস্ট গাইড সবাই ক্ষতির মুখে।
গোয়াইনঘাটের হাদারপাড় এলাকার ইঞ্জিন নৌকার চালক আরজু মিয়া। হাদারপাড় থেকে পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দিতে নৌকা চালান তিনি।
আরজু বলেন,“ জীবনে কখনো এ রকম বেকার হইনি। বিছনাকান্দিতে পর্যটকদের আনোগোনা সব সময় লেগেই থাকে। ফলে আয় ভালোই হচ্ছিল। কিন্তু চার মাস ধরে এখানে কোনো পর্যটক আসেননি। মানুষের সাহায্য-সহায়তা নিয়ে চলতে হচ্ছে।”
সিলেটের পর্যটন খাতের উন্নয়নে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন হাসান মোরশেদ।
শ্রীমঙ্গল শহরের গ্রিনলিফ রিসোর্টের পরিচালক এসকে দাস সুমন জানান, গত বছর তার রিসোর্টে ঈদের এক মাস আগেই সব কক্ষ বুকিং হয়ে যায়।
“কিন্তু এবার একবারেই শূন্য। কোনো অগ্রিম বুকিং নেই। পরিবারের অন্য খাত থেকে টাকা এনে কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছি।
“পর্যটন ব্যবসায়ীরা বছরে কোটি কোটি টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স দেন। কিন্তু বিপদের এই সময় সরকারের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন।”