পদ্মা সেতু: স্রোতের কারণে স্প্যান স্থাপনে বিলম্ব

চলমান বন্যায় পদ্মার প্রবল স্রোতের কারণে পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান সময় মতো বসানো যায়নি। স্রোত কমে গেলে আগস্টে আবার স্প্যান বসানোর কাজ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত জুন মাসে এই ৩২তম স্প্যান বসানোর কথা ছিল।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2020, 12:03 PM
Updated : 27 July 2020, 12:03 PM

সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩১টি বসানো হয়েছে। বাকি ১০টার মধ্যে তিনটি স্প্যান বসানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে মাওয়ার কুমারভোগ ইয়ার্ডে। আরও সাতটি স্প্যানও প্রস্তুত করা হচ্ছে।

তবে স্প্যান বসানোর কাজ বন্ধ থাকলেও সেতুর অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

একমাস ধরে চলমান বন্যায় ইতিমধ্যে দেশের উত্তরও মধ্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ দেশের নদনদীগুলো বইছে বিপদসীমার উপর।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা এখান ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। পরিসংখ্যান মতে স্মরণকালে সবচেয়ে বেশি পানি হয় ১৯৯৮ সালের বন্যায়। ভাগ্যকূল পয়েন্টে তখন ৭ মিটার ৫০ সেন্টিমিটার পানির লেভেল ছিল। এখন আছে ৭ মিটার ৭ সেন্টিমিটার। এখানে বিপদসীমার লেভেল ৬ মিটার ৩০ সেন্টিমিটার। অর্থ্যাৎ ১৯৯৮ সালে পদ্মা বিপদসীমার ১ মিটার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

“পদ্মা সেতুর কাছে এখন স্রোতের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩ দশমিক ৭৮ থেকে ৪ দশমিক ২৫ মিটার। এটিও নতুন রেকর্ড। স্রোতের প্রবল বেগ এখানেই থাকে। তবে আগে এত বেশি ছিল না।”

এই প্রকৌশলী জানান, এখন স্প্যান বসানো বাকি মূল পদ্মায়। যেখানে বারো মাস স্রোত থাকে। এখানে নাব্যতা সংকটের ঝুঁকি নেই। যেখানে নাব্যতা সংকট ঝুঁকি ছিল সে এলাকার সব স্প্যান বসে গেছে। তাই চ্যালেঞ্জ কম। স্রোত নিয়ন্ত্রণে আসলেই দ্রুত সময়ে স্প্যানগুলো বসিয়ে দেওয়া হবে।

“এখন স্রোতের কারণে স্প্যান বসানো বন্ধ থাকলেও অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে।”

পদ্মাসেতুর এই প্রকৌশলী আরও জানান, এ পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। মূল সেতুর কাজের চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৫২৩ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা। ১৪ কিলোমিটার জুড়ে নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। নদীশাসন কাজের চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ দশমিক ৮১ কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ২১২ দশমিক শূন্য ১ কোটি টাকা।

“সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের সাড়ে ১২ কিলোমিটার কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। মূল সেতুতে রয়েছে ৪১টি স্প্যান, যার সবগুলো মাওয়া এসেছে। এর মধ্যে ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছে যাতে দৃশ্যমান হয়েছে চার হাজার ৬৫০ মিটার। মাওয়া প্রান্তে আর ১০টি স্প্যান বসানো বাকি রয়েছে।”

তিনি জানান, মূল সেতুর দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৭৫০টি এবং দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ২৫৬টি স্থাপন করা হয়েছে। আর মাওয়া ও জাজিরা ‘ভায়াডাক্টে’ ৪৮৪টি সুপার গার্ডারের মধ্যে ১৭১টি স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সর্বশেষ ৩১তম স্প্যানটি বসে গত ১০ জুন। সেতুটি ৪ হাজার ৬৫০ মিটারে দৃশ্যমান।

প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের আরও বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যেও পদ্মা সেতুর কাজ থেমে নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগিয়ে চলছে কাজ। মাওয়া প্রান্তের বাকি ১০টি স্প্যান বসাতে তেমন বেগ পেতে হবে না।

ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি দ্বিতল হবে, যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। সেতুর এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। একেকটি খুঁটি ৫০ হাজার টন ওজন নিতে সক্ষম। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি’ (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’।