ক্রেতা ‘না পেয়ে’ মুখভার সাতমাইল পশুর হাটের খামারিদের

দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট যশোরের সাতমাইল হাটে কোরবানির পশুর সরবরাহ ভাল হলেও ক্রেতা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় খামারিরা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2020, 05:46 AM
Updated : 22 July 2020, 05:58 AM

তারা বলছেন, করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবের কারণে এ বছর কোরবানি নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। গত বছর এ সময়ে রাস্তায়, হাটে, খামারে ক্রেতারা কোরবানির জন্যে ঘোরাঘুরি করেছে; কিন্তু এবার দেখা মিলছে না।

যশোর জেলা শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে বসে জেলার বৃহৎ সাতমাইল হাট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এ হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকার পশুর হাটে।

সাতমাইল হাটের ইজারাদার নাজমুল হাসান বলেন, “কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ অন্তত ২০টি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা আসেন এ হাটে। কিন্তু এবার তা তারা বেশি না আসায় বেচাকেনা কম।"

নারায়ণপুর গ্রামের খামারি আনিছুর রহমান মঙ্গলবার এ হাটে গরু এনে দুপুর নাগাদ বিক্রি করতে পারেননি।

আনিছুর বলেন, “অন্যান্য বছর কোরবানির এক মাস আগে থেকেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে ব্যাপারীরা গরু কেনেন। এবার একজনও আসেননি। করোনাভাইরাসের কারণে সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

“দেনা করে গরু পাললাম; এখন দাম পাচ্ছিনে। গত বছর বন্যার কারণে লাভ হয়নি। আর এবার দেশের যে অবস্থা তাতে চালানটাই বাঁচবে না।”

প্রতিবছর কোরবানির সময় প্রতিহাটে অন্তত পাঁচ ট্রাক গরু কিনলেও মঙ্গলবার মাত্র দুই ট্রাক গরু কিনেছেন বলে জানালেন নারায়ণগঞ্জের মাহফুজুর রহমান মাহফুজ ব্যাপারী।

"এবার বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাস ও বন্যার কারণে পশুর চাহিদা কম। দামও তুলনামূলক অনেক কম।"

ঢাকার রাসেল ব্যাপারী বলেন, “মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ২৫টি গরু কিনেছি; এরমধ্যে ২০টি গরু দিয়ে একটি ট্রাক গাবতলি হাটে পাঠিয়েছি। মাথার বাজারের খোঁজ নিচ্ছি, ভাল হলে আরও দুই ট্রাক পাঠাব।"

এসব গরু ৭০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।

শার্শার খামারি আখতারুজামান বলেন, “গ্রামেও এখন গরু সস্তা, নেওয়ার লোক নেই। যে গরুগুলো হাটে আনিছি, গত বছর এই মাপের গরু ৬০-৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার ৪৫-৪৮ হাজারের ওপর দাম ওঠেনি।”

 “এই দামে গরু বিক্রি করলে লস হবে। তবে ভাবছি, চালানটা তোলার জন্য। চালান হাতে এলেই গরু বিক্রি করে বাড়ি চলে যাব।” বলেন তিনি।

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে হাটে গরুর দাম কম থাকায় ক্রেতারা খুশি।

হাটে আসা সামটার ইকবাল হোসেন কম দামে গরু কিনতে পেরে বেজায় খুশি।

তিনি বলেন, “সাড়ে চার মণ মাংস হতে পারে এমন একটা গরু কিনেছি ৭৫ হাজার ৫০০ টাকায়। অন্য সময় এর দাম লাখের উপরে হত।"

ঝিকরগাছার দেউলি গ্রামের আব্দুস সামাদ চার মণ মাংস হতে পারে এমন একটি গরু কিনেছেন ৬৭ হাজার টাকায়।

বেনাপোলের নামাজ গ্রামের আবু নিদাল ফয়সল একটি ষাঁড় কিনেছেন ৮০ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, “হাটে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি। তবে বড় গরুর দাম তুলনামূলক অনেক কম।"

এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সাতমাইল হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে হাট কমিটির সভাপতি ইলিয়াছ কবির বকুল জানান।

তিনি বলেন, “হাটে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে; হাত ধোওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এছাড়া হাটে আসা লোকজনদের নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে।”

খামারিদের হতাশা নিয়ে জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুমা আখতার বলেন, এ বছর এ উপজেলায় ৯৯০ জন খামারি ৩ হাজার ৬৪৫টি ষাঁড়, ৬০২টি বলদ, ২ হাজার ৮৪১টি ছাগলসহ মোট সাত হাজার ১৭৮টি গরু-ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন, যা উপজেলার চাহিদার দ্বিগুণ।

“কিন্তু ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা কম। খামারিরা খরচের টাকাও তুলতে পারছেন না বলে খবর পাচ্ছি। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।"

তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা যাতে হাটে আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে বলে জানান মাসুমা।