‘ক্রেতা নেই’ ঠাকুরগাঁওয়ের পশুর হাটে

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ের পশুর হাটগুলোয় গরু উঠতে শুরু করলেও ক্রেতার জন্য হাপিত্যেস করছেন বিক্রেতারা।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিমো. শাকিল আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2020, 09:52 AM
Updated : 21 July 2020, 12:07 PM

একদিকে করোনাভাইরাস মহামারী অন্যদিকে গরুর লাম্পি স্কিন রোগের কারণে কেনাবেচা কম বলে খামারি, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, এ জেলায় ১০ হাজার ৩৩১টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে গরু রয়েছে ছয় লাখ ৪৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। আর মারা গেছে প্রায় অর্ধশত গরু।

“জেলার ১৬টি স্থায়ী ও পাঁচটি অস্থায়ী হাটে বিপুল সংখ্যক গরুর আমদানি লক্ষ করা যাচ্ছে। এরই মধ্যে জমে উঠেছে পশুর হাটগুলো। দেশি গরুর পাশাপাশি খামারের গরুতে ভরে গেছে এসব হাট।”

তিনি বলেন, বাজারগুলোয় তাদের চিকিৎসক রয়েছেন। তারা লাম্পি রোগে আক্রান্ত গরু বাজারে তুললে তা ফেরত পাঠাচ্ছেন।

“তবে লাম্পি আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে মানবদেহের কোনো ক্ষতি হয় না।”

মঙ্গলবার সদর উপজেলার বড় খোচাবাড়িহাটসহ বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার হাটদখল করে রেখেছে দেশি গরু। কোরবানির এ সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারিরা ঠাকুরগাঁওয়ের হাটগুলোয় এসে গরু-ছাগল ক্রয় করতেন। এবার ব্যাপারিদের আনাগোনা নেই।

খামারি-ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটে প্রচুর গরু আছে কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে। এবার ঠাকুরগাঁওয়ের হাটগুলোয় ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা দামের গরু উঠেছে।

খোচাবাড়ি হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক সুজন আলী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দুটি গরু বিক্রি করতে হাটে তুলেছিলাম। দাম চাচ্ছি এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা। অথচ এই দুটি গরুর দাম বলছে ৭০-৮০ হাজার। ন্যায্যা মূল্যে বিক্রি করতে না পেরে গরু দুটো বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।”

লাহিড়ী হাটে গরু বিক্রি করতে আসা খামারি সিরাজুল ইসলাম তার খামারের ‘সবচেয়ে বড়’ গরুটি বিক্রি করতে হাটে নিয়ে এসেছেন।

সিরাজুল বলেন, “দাম হাঁকিয়েছি দুই লাখ। কিন্তু এখন দেখছি ক্রেতা নেই। ব্যাপারি নেই। স্থানীয় কিছু ক্রেতা ও স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা দাম বলছে ৯০ থেকে এক লাখ। গরুর দাম একেবারে নেই।”

ব্যাপারি না থাকায় দাম কম বলে জানান বিক্রেতারা।

আব্দুল আলিম নামে একজন স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী বলেন, “এ সময় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় বড় ব্যাপারির পদচারনা থাকত হাটগুলোয়। তারা ট্রাকভর্তি করে গরু-ছাগল নিয়ে যেত। এবার করোনাভাইরাসের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারিরা আসছে না। গরু বিক্রি করতে না পারলে সংসার চালানো নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।”

এদিকে হাটগুলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।

লাহিড়ী হাটের ইজারাদার আব্দুর রশিদ বলেন, হাটগুলোয় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করা হচ্ছে। হাটে মাস্ক ব্যবহার করতে ক্রেতা-বিক্রেতাকে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না। হাটগুলো থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

তবে পুলিশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির।

জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, হাট তদারক করতে তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ বাহিনী কাজ করছে।