বানের পানিতে আসছে ভারতীয় গরু

উত্তরের বন্যা পরিস্থিতিতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার অন্য কৌশলে ভারত থেকে আনা হচ্ছে গরু-মহিষ। উত্তরের এই জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ভারতের গরু-মহিষ আনতে কারবারিরা ব্যবহার করছে বানের পানি।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2020, 04:05 AM
Updated : 18 July 2020, 04:06 AM

এপারে কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকায় গরুর হাটগুলোতে এসব গরু-মহিষ বিক্রি হচ্ছে।

বন্যার কারণে বিজিবি ও বিএসএফের কাজে বিঘ্ন হওয়ায় পাচারকারীরা সুবিধা পাচ্ছে বলে বিজিবির ভাষ্য।

স্থানীয়রা জানান, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদসহ বন্যার বিপুল পানি ভেঙে প্রতিদিন ভেসে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ। দৈ খাওয়া, সাহেবের আলগা, নারায়ণপুর, রলাকাটা, কচাকাটাসহ কয়েকটি সীমান্তের নদীপথে এসব পশু আনা-নেওয়া করছে দুদেশের ‘চোরাকারবারিরা’।

স্থানীয়রা জানান, সীমান্তবর্তী যাত্রাপুরসহ কয়েকটি হাটে ভারতীয় গরু-মহিষ বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে। যাত্রাপুর হাটে ৫০-৬০ জন ভারতীয় গরুর কারবার করেন। প্রতি হাটে ৪০০-৫০০ ভারতীয় ছোটো গরু ও ২০০-৩০০ বড়ো গরু ও মহিষ ওঠে।

সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাত্রাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, পুরো হাট কাদা-পানিতে থৈ থৈ করছিল। এরই মধ্যে গরু বেচাকেনা চলছিল। অবশ্য ভারতীয় বড় গরু ও মহিষগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে টিনের চালাঘরে। আর দেশি গরুসহ ভারতীয় ছোটো গরুগুলো খোলা স্থানে বেচাকেনা হচ্ছিল।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় গরুর গায়ে এক ধরনের বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়। এসব চিহ্ন থেকে সীমান্তের ওপারের গরুর মালিকের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। সাধারণত নামের আদ্যক্ষর দিয়ে এসব চিহ্ন দেওয়া হয়।

কুড়িগ্রামের বাজারে ‘বাংলার রাজা’ নামের এই গরুর দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা

ব্রহ্মপুত্রের চর কালির আলগার গরু ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, “সারারাত বর্ডারে থাকি। নদী পথে ইন্ডিয়ার ব্যবসায়ীরা গরু ভাসিয়ে দেয়। নৌকা বা কলাগাছের জেলায় কামলারা অপেক্ষা করে। তারপর গরু ধরে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয়। আমরা কমিশনের ব্যবসা করি। বিক্রি করে টাকা পাঠিয়ে দেই।”

তিনি জানান, গরুর গায়ে চিহ্ন দেখে মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হন তারা। এক জোড়া গরু ধরে বুঝিয়ে দে্ওয়ার পর কামলা বা রাখালদের পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

যাত্রাপুরের গরু ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, গরু ভেসে আসার সময় স্রোতের কারণে অনেক গরু মরে যায়। আবার আধমরা গরু চরের মানুষ ধরে জবাই করে ভাগাভাগি করে নেয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী ভুট্রু মিয়া বলেন, গত বছরের চেয়ে ভারতীয় গরুর দাম অনেক কম। গত বছর যে গরু কিনেছেন এক লাখ টাকায়, এ বছর তা ৭০-৮০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

তবে করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে ক্রেতা স্বল্পতার কারণে কম দামে গরু কিনেও পোষাতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

যাত্রাপুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি জনি শেখের ভাষ্য, সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে পাচার কমে গেছে। এছাড়া বন্যা আরেকটি কারণ। যেসব গরু দেখা যাচ্ছে তা অনেক আগেই ভারত থেকে আনা। খামারিরা লালন পালন করে হাটে তুলছেন।

এদিকে, বিজিবিও মাঝেমধ্যে গরু আটক করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বিজিবির ২২ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, কোরবানির সময় বন্যা হওয়ায় পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বন্যার কারণে বিএসএফ ও বিজিবির পক্ষে অনেক পোস্টে সব সময় অবস্থান করা সম্ভব হয় না। সেই সুযোগে গরু পাচারের চেষ্টা হয়।

“তবে বিজিবির পক্ষ থেকে গরু পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। নদীপথে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত গরু আটক করা হচ্ছে।”

গত জুন মাসে বিজিবি ১৬৮টি গরু এবং জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৫টি গরু আটক করা হয় বলে তিনি জানান।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, সীমান্তপথে ভারতীয় গরু পাচার রোধে বিজিবি, পুলিশসহ প্রশাসনের পক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে। দেশি গরুর খামারিরা যেন সঠিক মূল্য পায় সেজন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তের ইউনিয়নগুলোতে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সভা ও মাইকিং করা হয়েছে।