গাজীপুরের তরুণীকে পঞ্চগড়ে ‘দলবেঁধে ধর্ষণ’, যুব মহিলা লীগ নেত্রী গ্রেপ্তার

মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করানোর কথায় গাজীপুর থেকে পঞ্চগড় এনে এক তরুণীকে ‘দলবেঁধে’ ধর্ষণের মামলায় যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  

পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2020, 04:33 PM
Updated : 16 July 2020, 05:31 PM

বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

এরা হলেন বোদা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকী (৪৬) ও বোদা পৌরসভার ঝিনুকনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন মিলন (৩৩)।  

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোদা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সায়েম মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা ও জবানবন্দি গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

মামলার এজাহারের বরাতে পরিদর্শক আবু সায়েম মিয়া জানান, অভিযোগকারী ওই তরুণী দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। ইউটিউবের জন্য বিভিন্ন মিউজিক ভিডিওতে কাজ করার সময় পাঁচ বছর আগে পরিচয় হয় সাজ্জাদ হোসেন মিলনের সঙ্গে। ঢাকায় মিলন ভিডিও সম্পাদনার কাজ করতেন। একই সঙ্গে তিনি ‘প্রথম বাংলা টিভি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চিফ নিউজ এটিডর ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত।

“এই সম্পর্কের সূত্র ধরে সাজ্জাদ নিজ এলাকা বোদায় একটি মিউজিক ভিডিও তৈরির জন্য মডেল হিসেবে কাজ করতে ওই তরুণীকে আসতে বলেন।”

পরিদর্শক সায়েম বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে বোদায় পৌঁছান ওই তরুণী। সাজ্জাদ তাকে নিয়ে যান উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকীর বাড়িতে।

বোদা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকী

“তার বাড়িতে সাজ্জাদসহ ৪/৫ জন তাকে ধর্ষণ করে। এরপর তাদের সহায়তায় পরিচিত আরও কয়েকজন এসে তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন তাকে বোদা পৌরসভার ভাসাইনগরে একটি বাড়িতে নিয়ে আবার দলবেঁধে ধর্ষণ করে।”

অভিযোগের বরাতে সায়েম আরও বলেন, এক পর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে থানায় আশ্রয় নেন ওই তরুণী। রাতেই তিনি সাজ্জাদ হোসেন মিলন, আবিদা সুলতানা লাকী ও বোদা উপজেলার নগরকুমারী এলাকার জসীম উদ্দিনের (২২) নামে উল্লেখ করে এবং ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ সাজ্জাদ হোসেন মিলন ও আবিদা সুলতানা লাকীকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বলে সায়েম জানান।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, “এই ধর্ষণের ঘটনায় অনেক বিষয় বেরিয়ে আসছে। আমাদের ধারণা একটি চক্র এ কাজে জড়িত আছে। আদালত আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাদের মাধ্যমে আরও অনেক তথ্য আমরা জানতে পারব। আমরা পুরো চক্রটিকেই বের করার কাজ করে যাচ্ছি।”

বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

গ্রেপ্তার দুজনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন মিলনের বাবা রফিকুল ইসলাম ছেলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, “ঘটনাটি আমরা জেনেছি। শুক্রবার মিটিং করে গ্রেপ্তার উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদককে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।”

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও এমন সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।