জামালপুরে ‘সাড়ে ৩ লাখ’ মানুষ পানিবন্দি

অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে যমুনা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বেড়ে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

লুৎফর রহমান জামালপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2020, 05:55 PM
Updated : 15 July 2020, 07:39 PM

পানির প্রবল চাপে মাদারগঞ্জ-মাহমুদপুর সড়ক বাঁধের লালডোবা এলাকায় ১০০ ফুট ভেঙে গেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

পুরো জেলার সাত উপজেলায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দেওয়ানগঞ্জের বেলতলী বাজার: ছবি- লুৎফর রহমান

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে বুধবার সন্ধ্যায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে পানি ২২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

মাদারগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুরে মাদারগঞ্জ–মাহমুদপুর সড়ক বাঁধের প্রায় ১০০ ফুট ভেঙে গেছে। এতে ওই সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 

মাদারগঞ্জের কড়ইচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, ঝাড়কাটা নদীর পানির প্রবল চাপে সড়ক বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে অন্তত ১০টি গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকেছে।

ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, বুধবার সকালে কাশারী ডোবা গ্রামের নয়ন মন্ডলের ছেলে কটা মন্ডল (৩৫) নামে এক কৃষক বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

বন্যার পানির চাপে মাদারগঞ্জ-মাহমুদপুর সড়ক বাঁধ ভেঙে গেছে: ছবি-লুৎফর রহমান

“সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে পানিতে ডুবে মারা যান।”

বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মাদারগঞ্জ উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম জানান, তার ইউনিয়নের ৩৩টি গ্রামের ৩১টি প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র, উচু বাঁধ, উচু সড়ক ও বিভিন্ন বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে। সড়কগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় বন্যা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। 

ইসলামপুরের যমুনা তীরবর্তী গ্রামগুলো পানিতে ভাসছে। কারো বাড়িতেই রান্না করে খাবার জো নেই।

শিংভাঙ্গা গ্রামের আজগর আলী, আব্দুল্লাহ, মতি শেক, কালু ও আজাহার আলীর বলেন, বলিয়াদহ-শিংভাঙ্গা পাকা সড়কের শেষ মাথায় কোমর সমান পানিতে নিমজ্জিত রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন শিংভাঙ্গা গ্রামের শতাধিক পরিবার।

এই গ্রামের আজাহার আলীর বলেন, “আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতিদিন কাজ করে ভাত খাই। কাজ নাই ভাত নাই। ঘরের মাঝে বানের পানি উঠছে। পানির কারণে কাজও নাই। তাই তিন দিন ধরে চিড়া মুড়ি খেয়ে জীবন বাঁচাচ্ছি।”

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন রোড পানির নিচে: ছবি-লুৎফর রহমান

এই গ্রামের শতাধিক পরিবারের একই অবস্থা বলে তিনি জানান।

ইসলামপুরের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, “দ্বিতীয় দফা বন্যায় আমরা ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছি। ৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আমরা দূর্গতদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছাতে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছি।”

জামালপুরের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানান, জামালপুরের সাত উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন এবং ৬টি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে জেলার ৮১ হাজার ২১৩ পরিবারের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

“সরকারি ৫১টি আশ্রয় কেন্দ্রে পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত তিন জন মারা গেছে।”

তিনি বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য পাঁচ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।