কক্সবাজার সৈকতের বর্জ্য অপসারণ শুরু, উৎস অনুসন্ধান চলছে

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণ কাজ চারদিন দিন পর শুরু হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2020, 01:42 PM
Updated : 15 July 2020, 02:18 PM

বুধবার সকাল ১০টায় কক্সবাজার সৈকতের দরিয়ানগর পয়েন্ট থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন।

এই অপসারণ কাজে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয়রাও রয়েছেন।

এদিকে, এসব বর্জ্যের উৎস সম্পর্কে জানতে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে বলে প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে শুরু হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকা সৈকতজুড়ে ভেসে এসেছে নানা ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য, ছেঁড়া স্যান্ডেল, মদের বোতল, মাছ ধরার ছেঁড়া জাল ও রশি। এছাড়া রয়েছে সামুদ্রিক কাছিমসহ নানা জলজ প্রাণী।

সৈকতের অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে এসব বর্জ্য। বর্জ্যের সঙ্গে জীবিত ও মৃত সামুদ্রিক কাছিমসহ কিছু জলজপ্রাণীও দেখা যায়।

বর্জ্যের দূষণ ও মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবেশবাদীদের ধারণা।

এরমধ্যে থাকা আহত অন্তত একশ সামুদ্রিক কাছিম সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়।

বিষয়টি তদন্ত করতে রোববার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নেতৃত্বে বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসম্পদ কর্মকর্তাকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।

বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মিলে সৈকতের বিশাল একটি অংশজুড়ে জমে থাকা বর্জ্যগুলো অপসারণের কাজ শুরু করেছে। এতে ১০টি পরিবেশবাদী সংগঠনসহ স্থানীয় দুই শতাধিক এলাকাবাসী অংশ নিয়েছে।

“এতে সৈকতের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকার বালিয়াড়িতে জমে থাকা বর্জ্যগুলো অপসারণ করা হবে। সংগৃহীত এসব বর্জ্য নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে মজুদ করে পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

জেলা প্রশাসক জানান, ইতিমধ্যে ৪০টি সামুদ্রিক কাছিম ও সাপসহ মৃত জলজ প্রাণিগুলো কয়েকটি স্থানে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এছাড়া আহত অবস্থায় সৈকতের বালিয়াড়িতে পড়ে থাকা শতাধিক কাছিমকে সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “বর্জ্যগুলো থেকে সংগ্রহ করা কিছু নমুনা দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এসব নমুনার অধিকাংশই বোতল ও অন্যান্য সামগ্রী আমাদের (বাংলাদেশে) দেশে ব্যবহৃত হয় না। এসব নমুনা তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেওয়া হবে। তারা হয়তো এগুলো পর্যবেক্ষণ করে উৎস সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারবেন।”

এদিকে, কী কারণে সামুদ্রিক প্রাণীগুলো মারা গেছে তা জানতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সামুদ্রিক কাছিমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীগুলোর নমুনা ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

কামাল হোসেন বলেন, প্রতিবেদন হাতে আসার পরই সামুদ্রিক কাছিমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী কেন মারা যাচ্ছে বা আহত হচ্ছে তার কারণ জানা যাবে। এছাড়া আহত আরও কোনো প্রাণী পাওয়া গেলে চিকিৎসা দিয়ে সাগরে অবমুক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণে মৎস্যসম্পদ ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।     

জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে।