গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কথাগুলো বলেন।
গাইবান্ধা-বালাসি সড়ক ধরে জেলা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ভাষারপাড়া গ্রাম।
মঙ্গলবার সরেজমিন ওই গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। যেসব ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গিয়েছিল সেসবে দ্বিতীয় দফায় পানি উঠেছে। পানিতে ডুবে আছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট।
বেলাল হোসেন আরও বলেন, “তিনদিন থাকি পানিত আচি। ঘরোত খাবার নাই। চ্যায়ারমেনের কাচে গেচিনো; কিন্তু ইলিপ পাই নাই।”
কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের বহু মানুষ বেলালের মতো একই কথা বলেন।
বেলাল হোসেন জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া তিন বিঘা জমি ও পাঁচ শতক বসতভিটা ছাড়া তার কোনো সহায়-সম্পদ নেই। তার মধ্যে দুই বিঘা জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেন। প্রতিবছর ভুট্টা বিক্রি করে দায়-দেনা মেটান।
“কিন্তু সেই ভুট্টার জমি এবার বন্যায় তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে থেকে ঘরের বেড়া ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে।”
প্রথম দফা বন্যায় ১১টি মুরগি তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে সংসার চালান এবং সেই টাকা শেষ হওয়ার পর সুদে দুই হাজার টাকা নিয়েছে, যা এখন শেষ বলে তিনি জানান।
একই গ্রামের রিকশা চালক সফিজল মিয়া (৪৫) বলেন, “হামারঘরে বাড়ির কাচে বোরমোপুত্র (ব্রহ্মপুত্র) নদী। নদীত পানি বাড়লে হামারঘরের ঘরবাড়ি ডুবি যায়। এর মদ্দে বান আসি হামরা হাবুডুবু খাবার নাগচি। আগের বানের পানিত ঘরের বেড়া নসটো হচে। সেগলা ভালো করি নাই। তার মদ্দে আবার পানি আচ্চে। এবার উচা জাগাত যাই নাই। তিনদিন থাকি কসটো করি পানির মদ্দে আচি। দুই বেরের বানের মদ্দে একবারো কোনো ইলিপ পানো না।”
একই গ্রামের দিনমজুর আবুল কালাম আজাদ (৫০) বলেন, বছরে গ্রামে দুইবার বিপদ আসে। শুকনো মৌসুমে নদী ভাঙন; বর্ষায় বন্যা। হাতে কাজ থাকলে কোনো অভাব হয় না। কিন্তু বন্যার সময় হাতে কাজ নাই। তিনদিন ধরে পানিতে আছেন। কিন্তু ত্রাণ পাননি।
চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও ত্রাণ পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পার্শ্ববর্তী সৈয়দপুর গ্রামের আবিরন নেছা (৫৫) বলেন, “মানসের বাড়িত কাম করি সোংসার চলে। একন বানের সমায় কাউয়ো কামোত ন্যায় না। এবাড়িত ওবাড়িত থাকি চায়া খাব্যার নাগচি। আগের বানোত চারটে হাস বেচি এ্যাক হাজার ট্যাকা পাচিনো। তাক দিয়া চাউল কিনচি। তাক শ্যাস হচে। একন খামু কী! ম্যালা কয়দিন চ্যায়ারমেনের কাচে গেচিনো, ইলিপ পাই নাই।”
একই ইউনিয়নের হাড়োডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মজিদুল ইসলাম (৫৫) বলেন, চারটি ঘর ও একটি নলকূপ ডুবে গেছে। তাই নদীর পানি গরম করে খাচ্ছেন। এছাড়া বন্যার পানিতে শৌচাগার ডুবে গেছে। তাই পায়খানা-প্রস্রাবের কাজ কলার ভেলায় করে দূরে গিয়ে করতে হচ্ছে।
তিনিও খাবারের কষ্ট এবং ত্রাণ না পাওয়ার কথা বলেন।
কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, “ইউনিয়নের ২৬ হাজার মানুষের মধ্যে আট হাজারের বেশি অভাবী। কিন্তু সে অনুপাতে ত্রাণ বরাদ্দ পাইনি। এ পর্যন্ত মাত্র ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি; প্রতিজনকে ১০ কেজি করে ২০০ জনের মধ্যে এগুলো বিতরণ করেছি। আরও ৭ মেট্রিক টন নতুন করে বরাদ্দ পেয়েছি। এগুলো বুধবার ৭০০ জনের মধ্যে বিতরণ করা হবে।”
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রায়হান বলেন, যেসব ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেগুলোতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।