হাসপাতালের খরচ এড়াতে নবজাতক রেখে লাপাত্তা

চিকিৎসা খরচ মেটাতে অক্ষম এক বাবা নবজাতক সন্তানকে হাসপাতালে রেখে সটকে পড়ার খবর পেয়ে ব্যয় মেটানোর দায়িত্ব নিয়েছে পুলিশ।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2020, 06:54 PM
Updated : 12 July 2020, 06:54 PM

কুমিল্লা শহরের ঝাউতলায় মা ও শিশু স্পেশালাইজ হসপিটালে শিশুটির চিকিৎসক জহিরুল আলম জানান, গত ৭ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর শিশুটির বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অপরিণত বয়সে মাতৃগর্ভে ২৮ সপ্তাহে জন্মানো শিশুটির ওজন সাড়ে সাতশ গ্রাম জানিয়ে তিনি বলেন, “বাবা-মাকে খুঁজে না পেলেও আমরা অপরিণত শিশুটির চিকিৎসা সেবা অব্যহত রেখেছি। তবে শিশুটির ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গ অপরিপক্ক থাকায় আমরা একটু সংশয়ে আছি।”

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, টাকার অভাবে হাসপাতালে নবজাতককে ফেলে চলে যায় বাবা-মা। মানবিক এ সংবাদ জানতে পেরে একজন মানুষ হিসেবে খুব খারাপ লাগছিল।

“ওই শিশুর বাবা-মাকে খুঁজে বের করে তাদের হাসপাতালে আসতে খবর পাঠাই। তারা হসপিটালে আসেন এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার প্রতিশ্রুতি দিই।” 

গত ৫ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপরিণত বয়সেই জন্ম নেয় জমজ দুটি কন্যা শিশু। পরে তাদের একটি শিশু মারা যায়। শারীরিক অবস্থাও ভালো না হওয়ায় অপর শিশুটিকে ৭ জুলাই মা ও শিশু স্পেশালাইজ হসপিটালে ভর্তি করেন তার বাবা মিজানুর রহমান।

ভর্তির পর হসপিটালের চিকিৎসার খরচের হিসাব শুনে লাপাত্তা হন মিজান। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না-এমন সংবাদ শুনে এগিয়ে আসেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. সৈয়দ নুরুল ইসলাম।

রোববার দুপুরে নগরীর ঝাউতলায় মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসার  ব্যয়ভার বহনের কথা জানান তিনি। 

এদিকে শিশুটির মা শিরিন আক্তার বলেন, গত ৫ জুলাই সিজারে দু’টি কন্যা শিশু জন্মানোর পর তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুস্থ হয়ে জানতে পারেন তার একটি শিশু মারা গেছে এবং অপরটি ঝাউতলায় চিকিৎসাধীন। পরে সন্তানকে দেখতে এ হসপিটালে আসেন তিনি। 

শিরিন আক্তার জানান, অর্থাভাবে সন্তানকে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। 

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী শিশুটির বাবা মিজানুর রহমান জানান, আগে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওড়ায় তাদের বাড়ি ছিল, এখন চান্দিনায় থাকেন।

করোনাভাইরাসের সংকটে রেস্তোরাঁয় বেচাবিক্রি না থাকায় চরম অর্থ সংকটে দিন কাটছে তাদের। এ অবস্থায় শিশুকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার সামর্থ হারিয়েছেন। তাই উপায়ান্ত না দেখে টাকা পয়সা জোগাড় করতে সন্তানকে হসপিটালে রেখেই চলে যান বলে জানান তিনি।