ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক নবজাতক শিশুর লাশ কবর থেকে তুলে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে; পরে শিশুটিকে আহমদিয়াদের নির্ধারিত কবরস্থানে দাফন করা হয়।
Published : 11 Jul 2020, 05:38 PM
দুদিন আগে বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের ঘাটুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটার খবর জানার পর আহমদিয়াদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি সেলিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা শহরের কান্দিপাড়ায় আহমদিয়াদের নিজস্ব কবরস্থান রয়েছে। এরপরও ঘাটুরা কবরস্থানে দাফন করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
পরে কান্দিপাড়া কবরস্থানে শিশুর লাশ দাফন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে উগ্রপন্থি হামলার শিকার হয়েছে। তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে ইসলামী বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
ঘাটুরা আহমদিয়া জামাতের সভাপতি এস এম ইব্রাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফেনী সদর উপজেলার বাসিন্দা ও সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ঘাটুরা গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের মেয়ে স্বপ্না বেগমের বিয়ে হয় ৪/৫ বছর আগে। বিয়ের পর থেকে স্বপ্না ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লেখাপড়া করছেন। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বাবার বাড়ি ঘাটুরা গ্রামে বসবাস করছেন।
সাইফুল ইসলাম ও স্বপ্না বেগম দুজনই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বলে জানান ইব্রাহিম।
তিনি জানান, গত ৭ জুলাই স্বপ্নার একটি মেয়ে হয়। নির্ধারিত সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়ায় নানা জটিলতায় গত বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শিশুটি মারা যায়। পরে সকালে তাকে ঘাটুরার সাতবাড়িয়া রোডের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দাফনের আগে স্থানীয় চেয়ারম্যান আজাদ হাজারী আঙ্গুরকে জানানো হয়েছিল বলেও তিনি জানান।
“কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক এই কবরস্থানে আহমদিয়াদের কাউকে দাফন করা যাবে না জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করে এলাকায় লোক জমায়েত ঘটায়। পরে ওই নবজাতকের মরদেহ কবর থেকে তুলে কবরস্থানের বাইরের সড়কে ফেলে রাখে।”
এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তাদের নাম না জানলেও চেহারা দেখে চিনতে পারবেন বলে জানান ইব্রাহিম।
নবজাতকের বাবা সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এলাকার জামাই। এলাকা সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নেই। আমার মেয়েটিকে বৃহস্পতিবার সকালে ঘাটুরা কবরস্থানে দাফন করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই এলাকায় কিছু লোক লাশ তুলে কবরস্থানের সীমানা প্রাচীরের বাইরে রাস্তায় ফেলে দেয়।”
তিনি জানান, ঘটনার খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ আসে। পুলিশ প্রহরায় ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আহমদিয়া জামাতের সভাপতি খন্দকার মুস্তাক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কিন্ত একজন নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলে ফেলে রাখার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজাদ হাজারী আঙ্গুরকে ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।