সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা: আ. লীগ কার্যক্রম বন্ধ

সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় বন্ধ ও দলের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2020, 12:45 PM
Updated : 9 July 2020, 12:45 PM

বুধবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের সকল ইউনিটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়।

একই দিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর দলীয় কার্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয় বলে স্থানীয় নেতা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা দুই পক্ষকেই শান্তি বজায় রাখার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। যারাই সহিংসতা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।”

আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের মধ্যে দলীয় কার্যালয়ে কী কাজ? আমরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই তো সীমিত পরিসরে কাজ করছি। এখন তো সভা সমাবেশ করার সময় নয়। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সময়। সে জন্য তাদের দলীয় কার্যালয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।”

এদিকে, বুধবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক সাংসদ হাবিবে মিল্লাত মুন্না স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের সকল ইউনিট এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে করোনাকালে ‘জনসমাবেশ ঘটে’ এমন রাজননৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্বান্তের বিষয়টি জানানো হয়।

সিরাজগঞ্জের নিহত জেলা ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়

কোনো জরুরি বা বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের আগে অবশ্যই তা দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককের সাথে পরামর্শ করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দলের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের যৌথ আহবানে বুধবার এক জরুরি বৈঠক হয়েছে।

“বৈঠকে সাময়িকভাবে দলীয় কার্যক্রম সীমিত করার অনুরোধ করা হয়। এরপর সবাই একমত হয়ে কার্যক্রম সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেন নেতারা।”

জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ বলেন, “প্রশাসনিক নির্দেশেই আমাদের এমন উদ্যোগ নিতে হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সংযত হওয়ার আহবান জানিয়েছি।”

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সুর্য্য বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশাসনকে দিয়ে এটি বাস্তবায়ন করছেন। ১৯৭১ সালের পর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় বন্ধের ঘটনা এটিই প্রথম।”

তিনি আরও বলেন, এর আগে দলের অভ্যন্তরে ৭/৮টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যার বিচার না হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। জেলার সমস্যা সমাধানে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিকে হস্তক্ষেপ করতে হলো।

গত ২৬ জুন বিকালে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারি হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। নয় দিন হাসপাতালে থাকার পর ৫ জুলাই সকালে তিনি মারা যান।

এই ঘটনায় বিজয়ের বড়ো ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের পাঁচ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এরপর ২৮ জুন মামলার আসামি জেলা ছাত্রলীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এ অবস্থায় ৭ জুলাই এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে একপক্ষ হামলা চালালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হন।

এই ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা ও সাধারণ সম্পাদ আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ বাদী হয়ে পাল্টাপাল্টি দুইটি মামলা করেছেন। মামলায় নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ২৮০ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় গত দুই দিনে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।