নড়াইলের লোহাগড়াকে অবরুদ্ধ করার আহ্বান মাশরাফির

করোনাভাইরাস বিস্তার প্রতিরোধ বিষয়ক এক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইলের লোহাগড়া পৌর এলাকাকে অবরুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

নড়াইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2020, 05:33 PM
Updated : 6 July 2020, 05:33 PM

সোমবার নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘করোনার বিস্তার প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এই সবার আয়োজন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু।

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য এই কৃতী ক্রিকেটার সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।

সভায় মাশরাফি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় লোহাগড়া উপজেলাকে ‘আইসোলেটেড’ করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।

তিনি বলেন, “লকডাউন শব্দটি এখন সবার কাছে আবেদন হারিয়েছে বলে আমার মনে হয়। তাই লকডাউন নয় আমি বলতে চাই লোহাগড়া ইজ আন্ডার আইসোলেশন।”

এটা বাস্তবায়নে ১০ জন করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক কাজ করবে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “টিমে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ এলাকার সচেতন মানুষেরা থাকবেন। চলমান বিপদের দিনে একসাথে টিম ওয়ার্ক করলে সবার মাঝে একটি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হবে।”

মাশরাফির ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’ আগামী ১০ তারিখ থেকে লোহাগড়া ও নড়াইল সদরে দুটি বুথের মাধ্যমে এলাকার করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য ‘পালস অক্সিমিটার’ ও ‘অক্সিজেন সিলিন্ডার’ সরবরাহ করবে বলে মাশরাফি জানান।

তিনি বলেন, টেস্টের পরিমাণ বাড়িয়ে পজিটিভদের আইসোলেট করা আর নেগেটিভরা যেন ঘরের বাইরে না যায় এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আশানুরূপ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমিত এই ক্রিকেটার বলেন, “আমি আমার সন্তানদের থেকে দীর্ঘ ১৭ দিন বিচ্ছিন্ন আছি, একজন পিতা হিসেবে এটা কতোটা কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন আছি। তারা আমার কাছে আসতে পারছেন না। এটা অনেক বেদনার।”

নিজে আক্রান্ত হলেও সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাশরাফি বলেন, “আমি শুধু আপনাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। হয়ত আমরা করোনাকে আটকাতে পারব না, তবে এখনই সকলে একমত হয়ে কাজ শুরু করলে আমরা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কমিয়ে আমাদের এলাকাকে নিরাপদ রাখতে পারব।”

আইসোলেটেড লোহাগড়া করার লক্ষ্যে লোহাগড়ার সাথে কয়েকদিনের জন্য সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মাশরাফী।

“আগামী ১৪ দিন লোহাগড়া আইসোলেটেড থাকুক। এটা আমার সিদ্ধান্ত। তবে আমার সিদ্ধান্তকে আমি কখনো চূড়ান্ত মনে করি না। আপনারা সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে আমি আশা রাখব লোহাগড়াকে ভালো রাখতে আপনারা সর্বোত্তম সিদ্ধান্তটি নিবেন।”

এ সময় মাশরাফির বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে সভায় উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু এটি বাস্তাবায়নে সকলে একমত বলে জানান।

জেলা প্রশাসক আনজুমান আরাও অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।

লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সভায় আগামী ২১ জুলাই পর্যন্ত লোহাগড়া পৌরসভাকে আন্ডার আইসোলেশনের আওতায় রেখে লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু বলেন, “মাননীয় সাংসদ আপনার শারীরিক অবস্থা এখনও পুরোপুরি ভালো নয়। আমরা আপনার এমন অবস্থা দেখে ব্যথিত। আমরা সবাই আপনার সুস্থতার অপেক্ষায় আছি।”

ভিডিও কনফারেন্সে আরও যুক্ত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়ারুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দৌলত আহমেদ খান, বর্তমান সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, লোহাগড়া থানার ওসি সৈয়দ আশিকুর রহমান প্রমুখ।