বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড় রক্ষা বাঁধে ফের ভাঙন

বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ের ভেঙে যাওয়া দ্বিতীয় রক্ষা গাইড বাঁধটির পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই ফের ভাঙন শুরু হয়েছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2020, 07:48 PM
Updated : 5 July 2020, 07:48 PM

রোববার ভোর রাতের কোনো এক সময় বাঁধটির দক্ষিণ পাশে অন্তত ৫০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন শুরু হয় বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা বাহাজ উদ্দিন জানান।

২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাশে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের গরিলাবাড়ি এলাকায় কয়েকটি গ্রাম ও সেতুর প্রথম রক্ষা বাঁধ রক্ষায় যমুনা নদীতে সিসি ব্লক ফেলে এবং কার্পেটিং করে দ্বিতীয় এই গাইড় বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫০ মিটার এই গাইড বাঁধ নির্মাণের কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘রানা বিল্ডার্স এন্ড সহিদ ব্রাদার্স’।

সেতু কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের কাজের কারণে এই অবস্থা হয় বলে এলকাবাসীর ভাষ্য।

স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যমুনা নদীর ভাঙন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু রাক্ষার্থে সেতুর পূর্ব পাড়ের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হয় দ্বিতীয় রক্ষা এই গাইড বাঁধ।

“২০১৭ সালের বন্যায় এটির ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের ফলে সেতুর পূর্বপাশের গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের গড়িলাবাড়ী ও বেলটিয়া গ্রামের শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যায়।”

এ ব্যাপারে সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল তাদের গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের অরক্ষিত নদী পাড়ের জন্যই তাদের বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মেরামতের কাজ করা হবে।”

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সেতু কর্তৃপক্ষের গাইড বাঁধের পর থেকে আমাদের স্থায়ী বাঁধ হওয়ার কাজ চলমান। নদীতে অতিরিক্ত পানির কারণে এই মুহূর্তে কাজটি বন্ধ রয়েছে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা অরক্ষিত থাকায় সেতু কর্তৃপক্ষের গাইড বাঁধে ভাঙন এমন কথা অবাহ্ছিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যপারে ঠিকাদারের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, “বরং তাদের কাজ টেকসই হলে এই ভাঙন হতো না।”

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স এন্ড সহিদ ব্রাদার্সের প্রতিনিধি এম এ ওয়াহাব বলেন, তাদের কাজের মান নিম্নমানের নয়। সঠিকভাবেই তারা কাজ শেষ করেছেন। তাদের কাজের দক্ষিণ পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ না করায় গাইড বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে।

গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মোছা. শাহিদা বেগম বলেন, “এহাবারে সর্বনাশ হইছে! শেষ রাতে মুহূর্তের মধ্যেই দশবারডা বাড়ি নদীতে গেছে গা। কামই শেষ করবার পারল না; এহনই বলক ভাংগা গেলে গা, কেবা কইরা কাম করছে। মনে হয় বেশি ভালা কাম অয় নাই। যেভাবে ভাংতাছে এহন বাড়ি আলারা হাইরবার পারতাছে না।”

এলাকবাসীর ভাষ্য, যেহেতু শুরুতেই এই গাইড বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে, সেহেতু কাজ কেমন হয়েছে তা শিগগিরিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার।

সেই সঙ্গে ভাঙন আতংকে থাকা যমুনা পাড়ের মানুষরা চান এপক্ষ-ওপক্ষ রশি টানাটানি না করে তাদের ভাঙনের কবল থেকে দ্রুত রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হোক।