কয়েক দিনে মেঘনার ভাঙনে অনেক বাড়িঘর, ছোট একটি বাজার ও বিআইডব্লিউটিসির টার্মিনালের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে আবারও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আশপাশের কয়েকশত পরিবার।
ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান বলেন, ২০১৬ সালে আলুরবাজার ফেরিঘাটের নৌ চ্যানেল ড্রেজিং করার পর থেকে দক্ষিণ পাশের বিশাল এলাকাজুড়ে এই ভাঙন চলছে। বর্ষা এলে তীব্রতা বেড়ে যায়। গত কয়েক দিনের ভাঙনে অনেক বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন নদীভাঙন আতংকে রয়েছে। ভাঙনে রোধের জন্য তারা এখন হোগলা পাতার বাঁধ দিচ্ছে।
চেয়ারম্যান এখানে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকাবাসী চরাঞ্চল থেকে হোগলা পাতা কেটে এনে তাই দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
আলুরবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন গাজী বলেন, তার বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে।
“যৌবনকাল থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই পর্যন্ত ১২ বার বাড়ি পাল্টালাম। তবু রাক্ষুসে ভাঙন আমার পিছু ছাড়ছে না। অহন আবার ভাঙতাছে। কী করমু বুঝতাছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে আছি।”
ওই এলাকার বাসিন্দা মো. সফিকুল ইসলাম রাঢ়ী বলেন, “ভাঙন রোধে শেষ আশ্রয়টুকু বাঁচাতে প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এজন্য আশপাশের চর থেকে সংগ্রহ করা হোগলা পাতা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।”
একই এলাকার মো. সানাউল্লাহ হাওলাদার এমনি এক আতঙ্কিত বাসিন্দা।
তিনি বলেন, “বয়স অইছে, বাবা। অনেকবার নদীভাঙনের শিকার অইছি। অহন ভাঙতাছে। বউ-পোলাপাইন নিয়া কোথায় যামু? আমাগো তো জায়গা কিননের মত পয়সা নাই।”
অনেক বসতঘর ও জমি বিলীন হয়ে যেতে দেখেছেন বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা রুমা বেগম ও রহিমা বেগম।
রুমা বলেন, কয়েক দিন ধরে মেঘনায় সব তলিয়ে যাচ্ছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। এলাকার অনেকে নদী ভাঙন আতংকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় লোকজন ভাঙন ঠেকাতে হোগলা পাতা দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বলেন, “ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বালিভর্তি বস্তা ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এসব বস্তা ফেলা হবে।”