এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোয় ত্রাণ বরাদ্দ পেলেও কোনো কোনো জেলায় বুধাবর শুরু হচ্ছে সেসব বিতরণ।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ধরলার পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়া দুধকুমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বন্যার পানিতে ৫ দিন ধরে বিপাকে পড়ে আছে। শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ৭ শতাধিক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের রাস্তায়।
তিনি জানান, গত সোমবার উপজেলা পরিষদে মিটিং করে হাতিয়া ইউনিয়নে ৩৫০ প্যাকেট ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা এখনও হাতে পাইনি।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, জেলার ৩টি পৌরসভা ও ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ৩৫৭টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য ৯ উপজেলায় ৩০২ মেট্রিক টন চাল এবং সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেন তিনি।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও ৮টি ইউনিয়ন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইদ্রিশ আলী বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য মঙ্গলবার চার উপজেলায় নতুন করে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হল।
জেলায় সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ১ লাখ ২০ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় মানুষের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার সাথে গবাদিপশুর খাবারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলের ডাকাত আতঙ্কে লোকজন রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নীলফামারী
এ জেলায় তিস্তার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ায় পয়েন্টে সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এর বন্যা পুর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে নামলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ওই পয়েন্টে নদীর পানির বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার।
এদিকে, তিন দিনের তিস্তার পানির বন্যায় জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের নদী বেষ্টিত প্রায় ১৫টি গ্রামের তিন হাজার ২২০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খগাখড়িবাড়ি ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নে নদী ভাঙনের শিকার হন ৬৯ পরিবার।
“বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারের মাঝে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।”
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, “গত সোমবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।”
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রাণী রায় বলেন, “তিনদিনের বন্যায় উপজেলায় তিন হাজার ২২০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে ৬৯টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ১২৫ মেট্রিকটন চাল ও দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা বিতরণ শুরু হয়েছে।”
বগুড়া
যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বগুড়ায় ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর, রহদহ, ধুনট উপজেলার বৈশাখী, শহড়া বাড়ীর নিম্নাঞ্চল এবং পাট, ধানসহ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
বৈশাখীর চরের আব্দুল মোন্নাফ জানায়, সব পাটক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ডাকাতের ভয়ে গরু ছাগল নিয়ে রাত জেগে বসে থাকি।
তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার হিসেব অনুযায়ী নদীর পানির স্তর ছিল ১৭ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার।
জামালপুর
জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানান, যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, সরিষাবাড়ি ও সদর উপজেলার ৩৮ টি ইউনিয়ন এবং ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ পৌরসভার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকেছে।
আলী আরো জানান, বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির পাট, আউশ, বাদাম ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।
“বানভাসীদের জন্য নগদ ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ও ২১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”