সোমবার রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, জামালপুর, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ থেকে মারা যাওয়ার এসব খবর আসে।
এদের কারো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আবার অনেকে এ রোগের লক্ষণ নিয়ে মারা গেছেন। তবে রাজশাহীতে মারা যাওয়া সাংবাদিকের নমুনা পরীক্ষায় এ রোগ ধরা পড়েনি বলে জানানো হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর:
রাজশাহীতে সাংবাদিকের মৃত্যু
রাজশাহী নগরের হেতেমখাঁ কবরস্থানে সোমবার দুপুরে জেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তবিবুর রহমান মাসুমের (৫২) দাফন হয়েছে।
এর আগে জোহর নামাজের পর রাজশাহীর হজরত শাহমখদুম (র.) জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রোববার রাত ৯টার দিকে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মারা যান তিনি।
নগরের পাঠান পাড়ার বাসিন্দা তবিবুর রহমান মাসুম রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক সোনালী সংবাদ’র প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। ২৬ বছর ধরে এ পত্রিকায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সভাপতি এবং নগরের বঙ্গবন্ধু কলেজে শিক্ষক ছিলেন তিনি।
তবিবুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা জানিয়েছেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জ্বর ও কাশি ছিল মাসুমের।
“কোনোভাবেই জ্বর কমছিল না। হঠাৎ রোববার সন্ধ্যায় তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। করোনা সন্দেহে দ্রুত তাকে রাজশাহীর খ্রিস্টান মিশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অক্সিজেন দেওয়া হলে মাসুমের ভালো লাগে। কিন্তু শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না বলে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
“দ্রুত তাকে রামেক হাসপাতালের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন “
সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলী জানান, গত শুক্রবার তিনি এবং তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন।
“কিন্তু রোববার রাতে মাসুমের মৃত্যুর পর দেওয়া রিপোর্টে তাদের দুজনেরই করোনা নেগেটিভ এসেছে।”
কুষ্টিয়ায় দুইজনের মৃত্যু
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কুষ্টিয়ায় বিআরবি গ্রুপের কর্মকর্তাসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার বেলা ১২টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বিআরবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের হিসাব বিভাগের একজন (৪৮) জ্বর ও শ্বাসকষ্ট সমস্যা নিয়ে আসে। তখন সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ২৫০ শয্যা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার জানান, প্রয়াতের করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রয়াতের স্বজনরা জানান, সোমবার সকালে অফিস কক্ষে গুরুতর অসুস্থ বোধ করেন। এ সময় তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
“কয়েকদিন ধরেই জ্বর ও সর্দিতে ভুগছিলেন তিনি। সকালে তার অফিশিয়াল ট্যুরে খুলনায় যাওয়ার কথা ছিল।”
এছাড়া আগের রোববার রাতে কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুরের এক বাসিন্দা (৪০) জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানান ডা. তাপস কুমার সরকার।
জেলার সিভিল সার্জন আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পরে পিসিআর ল্যাবে প্রাপ্ত ফলাফলে জানা যায় তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন।
সোমবার পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমষে শনাক্ত নয় জন মারা গেছে। এছাড়া এ রোগের উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলছে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস।
ময়মনসিংহে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ২
ময়মনসিংহে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
প্রয়াত (৫৫) নগরীর জব্বার আলী কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী ছিলেন।
সিভিল সার্জন এবিএম মসিউল আলম বলেন, গত ২৩ জুন জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ওই ব্যক্তি এস কে হাসপাতালে ভর্তি হন।
“তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় করোনা ডেডিকেটেড ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়।”
এছাড়া, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
ওই ব্যক্তি সোমবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, এই ব্যক্তি গত ২৭ জুন হৃদরোগের সমস্য নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন তার করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়ে।
“রোববার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সকালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ”
এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়মনসিংহের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য।
জামালপুরে জেলা পরিষদ কর্মীর মৃত্যু
জামালপুরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে জেলা পরিষদের এক কর্মী (৫৫) মারা গেছেন।
সোমবার দুপুরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
জামালপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, “ওই ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে গত রোববার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
“সোমবার দুপুরে মারা যান জামালপুর সদরের ধোপাকুড়া গ্রামের এ বাসিন্দা।”
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, প্রয়াতের করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
গাইবান্ধায় চট্টগ্রাম ফেরতের মৃত্যু
গাইবান্ধায় ফেরার পর মারা গেছেন চট্টগ্রামের পোশাক কারখানার এক কর্মী।
সোমবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজন পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করেন বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ।
রোববার রাতে গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়ায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এই ৪৫ বছর বয়স্ক ব্যক্তির নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে বলেন তিনি।
গাইবান্ধা পৌরসভার মধ্যপাড়ার এ বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, রোববার সকালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গাইবান্ধায় আসেন। সন্ধ্যায় তিনি ডায়রিয়া এবং তীব্র শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন।
“এ অবস্থায় রাতে তাকে গাইবান্ধা জেনারের হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।”
সিরাজগঞ্জে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃত্যু
সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জে কারোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
এরা হলেন রায়গঞ্জ উপজেলার এরানদহ কৃষ্ণদিয়া গ্রামের মৃত আহেজ উদ্দিন সেখের ছেলে হামিদুর রহমান (৪৮) ও শহরের মিরপুর বিড়ালাকুঠি মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল হোসেন (৮০)।
এদের মধ্যে হামিদুর রহমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। হামিদুর স্ট্যাম্প ভেন্ডার হিসাবে সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে কর্মরত ছিলেন এবং শহরের ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন জাহিদুল ইসলাম জানান, ২৪ জুন হামিদুর রহমানের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর থেকে তিনি শহরের ভাড়া বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। সোমবার সকালে তিনি সেখানেই মারা যান। পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, মৃত আবুল হোসেন ৪/৫দিন থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। রোববার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তিনি মারা যান। মৃত ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
নবাবগঞ্জে আক্রান্ত দুইজনের মৃত্যু
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়াল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রক) ডা. হরগোবিন্দ সরকার অনুপ জানান, সোমবার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন এবং ঢাকার সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রয়াতদের একজন (৭৫) উপজেলা সদর কলাকোপা ইউনিয়নের বড়নগর গ্রামের এবং অপরজন (৭০) গালিমপুর ইউনিয়নের শাহবাদ গ্রামের বাসিন্দা।এদের মধ্যে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য পরিদর্শকও রয়েছেন।
ডা. অনুপ বলেন, “ওই দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।”