বন্যার অবনতি, বহু মানুষ পানিবন্দি

উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বিপুল মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2020, 08:35 PM
Updated : 29 June 2020, 04:36 AM

হাজার হাজার বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি বহু মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যায় পড়েছেন বন্যা কবলিত এসব এলাকার মানুষ। অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমলেও এখনও বিপদসীমার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা শহরে বাড়িঘরে ওঠা পানি নামতে শুরু করেছে।   

ধরলা, ব্রহ্মপূত্র, যমুনা, ঘাঘট ও সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান,
ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ১৬টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫০টির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

একদিকে করোনাভাইরাসের কারণে টানা তিনমাস ঘরে বন্দি। তার উপর বন্যার ধাক্কায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল সন্ধ্যা ৬টায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, বন্যায় ১ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে নিমজ্জিত বা ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার হেক্টর বলে সংশ্লিষ্ট কৃষক ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে জানা গেছে।

মৎস বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও ইতিমধ্যে শতাধিক পুকুর প্লাবিত হওয়ায় খবর পাওয়া গেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছচাষিরা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচরের কৃষক জব্বার, মজিদ ও দিনমজুর আব্বাস আলী জানান, বৃষ্টির কারণে রান্না করতে না পারায় দুপুর পর্যন্ত রান্নার কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

একই গ্রামের সরবেশ আলী বলেন, “গরু দিয়েই আমার সংসার চলে। ঘরে ১২টা গরু রয়েছে। এখন মানুষের চেয়ে গো-খাদ্য নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যায় ৩০২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের পাশাপাশি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

“আমরা প্রতিদিন বন্যা কবলিতদের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কেউ যাতে খাদ্য সংকটে না পরে এবং যাদের নিরাপদে সড়িয়ে নেওয়া দরকার তাদের পাশে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যন্ত এলাকায় থেকে কাজ করছে।”

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান,
জেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

রোববার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন হাজার বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব বসতবাড়ির প্রায় ১৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষ ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু তারা বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার পড়েছেন।

এদিকে ঘাঘট নদীর পানির চাপে শহররক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।

বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা, হরিপুর, তারাপুর, কাপাসিয়া, গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি, এরেন্ডাবাড়ি, কঞ্চিপাড়া, উদাখালী, গজারিয়া, ফজলুপুর, উড়িয়া, এবং সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ও হলদিয়া।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, রোববার বিকাল ৩টায় জেলার ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং পানি বৃদ্ধি এ ধারা আরও দুইদিন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও জানান, ঘাঘট নদীর পানির চাপে জেলা শহরের ডেভিট কোম্পানিপাড়া এলাকায় শহররক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। এছাড়া গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো জরুরিভাবে মেরামত করা হচ্ছে।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ জানান, ফুলছড়ি ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি নামাপাড়া, পশ্চিম কালুরপাড়া, পেপুলিয়া, গাবগাছি, পূর্ব টেংরাকান্দি, খোলাবাড়ি, দেলুয়াবাড়ি, জামিরা, বাগবাড়ি, খঞ্চাপাড়া গ্রামের অন্তত ৫শ পরিবার ও এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের সন্ন্যাসীর চর, মাগরীঘাট, পশ্চিম জিগাবাড়ী, বুলবুলি, পাগলারচরসহ কয়েকটি গ্রামের এক হাজার এবং কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের রসুলপুর, খলাইহারা, পূর্ব কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর, কালাসোনা, উত্তর উড়িয়া, উদাখালী ইউনিয়নের পূর্ব সিংড়িয়া, গজারিয়া ইউনিয়নের গলনা, জিয়াডাঙা, ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, কাউয়াবাধা, উজালডাঙা, কৃষ্ণমনি গ্রামের দুই হাজার পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, পানি বাড়ার সাথে সাথে ফুলছড়ি ইউনিয়নের জামিরা ও নামাপাড়া গ্রামের ৫৭টি, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ি, আলগারচর, ভাটিয়াপাড়া, পূর্ব হরিচন্ডি, পাগলারচর, তিনথোপা গ্রামে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ৮৫টি পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন বলেন, “বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবার গুলোর সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছি। বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে জেলায় ৮৫০ হেক্টর জমির পাট, আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি ও আউশ ধানসহ রবি ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম ইদ্রিশ আলী বলেন, “এ পর্যন্ত ৪০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২ লাখ টাকা বন্যাকবলিত চার উপজেলায় বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্ব-স্ব উপজেলাগুলো ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এসব বিতরণ করবে। রোববার বিকালে নতুন করে ৬০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি, যা পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ দেওয়া হবে।”

জামালপুর প্রতিনিধি জানান,
উজানের ঢল ও টানা বর্ষণে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে।

যমুনা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। জেলার ২০টি ইউনিয়নের ১ লাখ ২১ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্যায় দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় ১১২টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানি ঢুকেছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদেও।

যমুনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, দশানী, জিঞ্জিরাম ও ঝিনাইসহ অন্যান্য শাখা নদ-নদীর পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। এতে পানি ছড়িয়ে পড়ছে নিম্মাঞ্চলে। ডুবে গেছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজপাঠক আব্দুল মান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েছে ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

“ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ বসতবাড়ি ছেড়ে ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে উচু বাঁধ, সড়ক, সেতুর উপর।”

মান্নান জানান, গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের ভাঙা অংশ দিয়ে দ্রুত পানি ছড়িয়ে পড়ছে। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলোর সাথে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, যমুনার পানির তীব্র স্রোতের কারণে গুঠাইল বাজারের কাছে রাস্তা ভেঙে ইসলামপুর-গুঠাইল সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এছাড়াও উলিয়া-বলিয়াদহ সড়কের ৫টি স্থানে সড়ক ভেঙে হু হু করে লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে।

ইসলামপুরের দেওয়ানপাড়ার হযরত আলী বলেন, “পানি বাড়ছে হু হু করে। ২৪ ঘণ্টা আগে পানি উঠানে ছিল। এখন পানি ঘরের ভেতর। অবশেষে বসতবাড়ি ছেড়ে তিনি আশ্রয়ের সন্ধ্যানে বের হন।” 

চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, “চিনাডুলি ইউনিয়নে নিন্মাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত। এসব এলাকার অন্তত আট হাজার মানুষ পানিবন্দি।

বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান।

রোববার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পানি ঢুকেছে।

দেওয়ানগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সার্বক্ষণিক বন্যা কবলিত এলাকায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

“আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।” 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানান, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ২০ ইউনিয়নের ৩১ হাজার ১৮৩টি পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব পরিবারের ১ লাখ ২১ হাজার ৩৪২ জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্যায় ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের ১১২টি বসতবাড়ি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য ৩৪৭ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, জেলায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৬৩২ হেক্টর জমির পাট, ২৮৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, ২৯৩  হেক্টরের সবজি, ৬৫ হেক্টর বীজতলা, ৫ হেক্টর জমির তিল, ৫ হেক্টর জমির ভূট্টা  ও ৫ হেক্টর জমির বাদাম।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান,
ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার নদীর পানি ৩৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৯টা থেকে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিরাজগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম।

এছাড়া সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টেও বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পানি বৃদ্ধির ফলে বাঁধের অভ্যন্তরে থাকা নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। আগাম বন্যার পানি আসায় কৃষকদের কাউন, তিল, পাটসহ আবাদি জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশের বীজতলা।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান,
সুরমা নদীর পানি আগের চেয়ে কমলেও বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কমেনি মানুষের দুর্ভোগ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ শহরের অনেক এলাকা থেকে কিছুটা পানি নেমেছে।

রোববার বিকাল থেকে শহরের তেঘরিয়া, উত্তর আরপিন নগর, ষোলঘর, কাজিরপয়েন্ট নবীনগর, উকিলপাড়ার সড়ক থেকে পানি নামতে শুরু করে।

শহরের আরপিননগর এলাকার রুজেল আহমদ বলেন, “আমাদের এলাকার মূল সড়ক উপছে সুরমা নদীর পানি বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছিল। সন্ধ্যায় অনেকের বাড়িঘর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। দ্রুত পানি না নামলে আমাদের দুর্ভোগ শেষ হবে না।”

শহরের কাজিরপন্টে এলাকার সাদিকুর রহমান স্বপন বলেন, “গত দুই দিন ধরে পানিবন্দি। আমাদের ঘরে এখনও পানি, তবে পানি অনেকটা নেমে গেছে। যদি এভাবে পানি কমতে থাকে তাহলে রাতের মধ্যে আশা করছি সব নেমে যাবে।”

শহরের নবীনগর এলাকার দিলাল আহমদ বলেন, পানির নামার সঙ্গে সঙ্গে রাস্থাঘাটে ভাঙন শুরু হয়েছে। খানাখন্দ ভেসে উঠছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত উদ্যেগ নিতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান জানান, রোববার সকালে সুরমা পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সন্ধ্যায় কমে ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, “পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলায় ৪৪ হাজার ৪১০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। আটটি উপজেলায় আমরা ৭৮টি  আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি। যেকোনো সমস্যা সমাধান ও সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।”

ক্ষত্রিগস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রশাসন ৪১০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ২৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে তিনি জানান।