খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনের ঘোষণা

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বেচ্ছা অবসরে পাঠিয়ে পিপিপির আওতায় চালুর সরকারি ঘোষণার মধ্যে কয়েকটি দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েছেন খুলনার পাটকল শ্রমিকরা।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2020, 05:06 PM
Updated : 28 June 2020, 05:45 PM

রোববার দুপুরে নগরীর খালিশপুর জুট ওয়ার্কার্স ইনস্টিটিউট কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ, নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আব্দুল হামিদ।

এর আগে শনিবারও খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকলের গেইটে শ্রমিক সমাবেশ করেন তারা।   

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে নতুন আধুনিক মেশিন স্থাপন, পাট ক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ ও উৎপাদন অব্যাহত রাখা।

রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী দেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রায় পঁচিশ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান।

সিবিএ নেতা আব্দুল হামিদ জানান, শ্রমিকদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মিলগেটে সন্তানদের নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট, মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত মিলগেটে শ্রমিক-কর্মচারীদের অবস্থান।

এরপরও দাবি আদায় না হলে বুধবার দুপুর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরণ অনশন করবেন বলে ঘোষণায় বলেন সরদার আব্দুল হামিদ।

খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে কর্মরত প্রায় ১০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন জানিয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, “নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ফের বন্ধের পাঁয়তারা চলছে।”

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল পিপিপির আওয়ায় নেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভও প্রকাশ করেন শ্রমিক নেতারা।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ, নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিপিপি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর কোনো সুফল দেবে না। বরং বিজেএমসিকে বিলুপ্ত করে মিলের আধুনিকায়নই এ শিল্পকে বাঁচাতে পারে।”

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে পিপিপির আওতায় নেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “এতে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। সরকারও ক্রমান্বয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির আওতায় পাটকল বন্ধ রাখা হয়। তবে পরবর্তীতে পাটজাত বস্তার প্রয়োজন হলে ২৫ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে উৎপাদন শুরু করে পাটকলগুলো।

দেশে ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার এই দিনই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর প্রায় পঁচিশ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার।

রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, “পাটকলগুলোতে লোকসান হচ্ছে, এজন্য সরকার চিন্তা করেছে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে এই খাতকে এগিয়ে নিতে।”

পাটকলগুলোতে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন বলে বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে মনোয়ার জুট মিল বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানায় ২৪ হাজার ৮৬৬ জন স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক আছে প্রায় ২৬ হাজার।

বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো লাভ দেখাতে পারলেও বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলো বছরের পর বছর লোকসান করে যাচ্ছে, যার পেছনে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।