টেকনাফ সৈকতে ভেসে এল মৃত তিমি

কক্সবাজারের টেকনাফ সৈকতে ভেসে এল একটি মৃত তিমি; তবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2020, 03:30 PM
Updated : 22 June 2020, 03:30 PM

সোমবার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ সৈকতের গোলারচর পয়েন্টে মৃত তিমিটি দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তিমিটির পিঠের চামড়া কয়েক জায়গায় উঠে গেছে। তবে সেগুলো আঘাতের চিহ্ন নয় বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা জসিম মাহমুদ জানান, টেকনাফের সৈকত ও নাফ নদীর মোহনার গোলারচর পয়েন্টে একটি বিরাটকায় ‘মাছ’ দেখতে পেয়ে ছোট শিশুরা খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি তিমি পড়ে থাকতে দেখা যায়। মেপে দেখা যায় সেটি ৬ ফুট লম্বা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপরের অংশ দেখে প্রথমে এটিকে ডলফিন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। পরে পেটের নিচের অংশ দেখে বোঝা যায় এটি তিমি ।”

বিরাটকায় এই সামুদ্রিক প্রাণীর ছবি ও ভিডিও দেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, “এটি তিমি। একে তিমির বাচ্চাও বলা ঠিক হবে না। কারণ এটির আকার দেখে ধারণা করা হচ্ছে, মধ্য বয়সী একটি তিমি।”

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে আট প্রজাতির তিমি থাকার তথ্য এর আগে জরিপে রেকর্ড রয়েছে।

“সৈকতে মারা যাওয়া তিমিটি কোন প্রজাতির সেটা ছবি কিংবা ভিডিও দেখে বোঝা খুবই কঠিন। তার ওপর দেখা গেছে ওই তিমির শরীরের উপরের অংশে চামড়াও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। এই তিমিটি অসুস্থ হয়েও সেখানে এসে থাকতে পারে।”

এটিকে এফআইএন প্রজাতির তিমি হিসেবে শনাক্ত করেছেন কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশরাফুল হক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কক্সবাজার সৈকতে সচরাসচর দেখা না গেলেও বঙ্গোপসাগরের এই এলাকায় তিমির বিচরণ রয়েছে।

“১৯৯১ সালে এ রকম একটি মৃত তিমি ভেসে আসে। তারপর ২০০৭ সালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকায়, ২০০৯ সালে টেকনাফের পাহাড়ছড়া এলাকায় তিমির দেখা মিলেছিল।”

কক্সবাজার জেলার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোরার চরে রোববার রাতের জোয়ারে ভেসে আসে একটি মৃত তিমি। ছবি: জসিম মাহমুদ

এই তিমি কী কারণে মারা গেছে, সেই অনুমান করতে পারছেন না অধ্যাপক সাইদুর রহমান।

তিনি বলেন, “এখন তো সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। যদি সাগরে জেলেরা মাছ ধরত তখন বলা যেত জেলেদের আঘাতে সেটি মারা গেছে। এখন তো সেটিও বলা যাবে না। হয় তো অসুস্থতার কারণে বিভ্রান্ত হয়ে টেকনাফ সৈকতের কিনারায় এসে তিমিটি মারা গেছে।”

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা জসিমের ধারণা, নাফ নদীতে প্রবেশের সময় বালুরচরে আটকা পড়ে তিমিটি মারা যেতে পারে।

গত শনিবার শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সৈকতে এ ধরনের একটি তিমি দেখা গিয়েছিল জানিয়ে জসিম বলেন, “এটি সেইটা কি না তা বলা যাচ্ছে না। কারণ সেটা এটার চেয়ে বড় ছিল।ওইটা ব্লকে আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়েছিল। পরে জোয়ারের পানিতে বারবার ব্লকে আটকা পড়লে স্থানীয় যুবক ও জেলেরা সেটিকে সাগরে ফিরে যেতে সহায়তা করে।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ার পর থেকে সৈকতে নতুন নতুন সামুদ্রিক প্রাণীর দেখা মেলাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একের পর এক সৈকতে আমরা বিরল দৃশ্য দেখছি। সাগরে ডলফিন দলের খেলা। তারপর তিমির দেখা এটি সত্যি আমাদের জন্য সৌভাগ্যের।

“তবে টেকনাফ সৈকতে তিমি মারা যাওয়াটি খুবই দুঃখজনক।”

সৈকতে এখন তিমির উপস্থিতি থাকায় কোস্টগার্ড, উপকূলীয় বন বিভাগ এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানীয়দের এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তিমিটি গোলারচর পয়েন্টের বালিয়াড়িতে পড়ে ছিল বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে টেকনাফের ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “খবরটি শোনার পর টেকনাফের মৎস্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।”

টেকনাফ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।