সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামে গত ৯ জুন এ হামলার অভিযোগে আছিয়া খানম (৫৫) মামলা করেছেন রোববার [১৪ জুন]।
ঘটনার পর থেকে হামলাকারীদের ভয়ে পরিবারের লোকজন ঘরে ঢুকতে পারছেন না বলে আছিয়ার অভিযোগ।
মামলায় স্থানীয় সুমন চৌধুরী (৩৫), জাহিদ চৌধুরী (৫০), ইব্রাহিম মিয়া (৩০), শামীম মিয়া (২৫) ও বাদল চৌধুরীসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
এই বিরোধের ঘটনায় এই দুই পক্ষ আগে আরও দুটি পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। একটি করেছেন আছিয়া; অন্যটি করেছেন বাদল চৌধুরী।
আছিয়া খানমের তিন মেয়ের মধ্যে দুই জনের বিয়ে হয়েছে। তারা স্বামীর সঙ্গে বিদেশে থাকেন। আরেক মেয়ে আছিয়ার সঙ্গে থেকে এখনও লেখাপড়া করছেন।
মামলার এজাহারে আছিয়া খানমের অভিযোগ, গত ৯ জুন আসামিরা তাদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় আছিয়া বেগম ও তার ভাই রবিন আহমেদ রতনকে অমানবিকভাবে মারধর করেন তারা।
পরদিনে সকালে সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরী লোকজন নিয়ে আছিয়া খানম ও তার ভাই রবিন আহমেদ রতনের ঘরবাড়ি লুটপাট করে বলে মামলায় বলা হয়।
আছিয়া খানম ও তার ভাইয়ের বাড়ি থেকে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র লুট ও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার জিনিসপত্র ও আসামারি নষ্ট করে বলেও তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন।
আছিয়া খানম ও রবিন আহমেদ রতনের ঘরবাড়ি লুটপাটের বিষয় জানতে শুক্রবার তাদের বাড়িতে যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি।
সরেজমিনে দেখা যায়, আছিয়া বেগমের ঘরের আসবাবপত্র ভাঙাচোরা ও তছনছ অবস্থায় রয়েছে। টেলিভিশন, রিফ্রিজারেটর, আলমারিসহ ঘরের বিভিন্ন দামি জিনিসপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও আছিয়ার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরী লোকজন নিয়ে গত ১০ জুন আছিয়া ও তার ভাইয়ের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেন। এরপর থেকেই আছিয়া, তার মা ও ভাইকে এই বাড়িতে ঢুকতেও দিচ্ছেন না আসামিরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রইস মুন্সি বলেন, আছিয়ার বাড়ির সীমানা নিয়ে বাদল চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দেন। জায়গা নিয়ে সর্বশেষ আবারও তাদের মধ্যে গত ৯ জুন বিবাদ হয়। ওইদিন সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরীর লোকজন আছিয়া ও তার ভাইকেসহ আরও কয়েকজনকে মেরে আহত করেন এবং তাদের বাড়ি ঘরে লুটপাট করেন। এরপর থেকে আসামিরা আছিয়া খানম, তার মা ও ভাই কাউকেই তাদের বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
আছিয়া খানম বলেন, সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরী সঙ্গে তার দীর্ঘদিন ধরে সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে এর আগেও বাদল চৌধুরীর লোকজন তার বাড়িতে হামলা করে। ওই ঘটনায় গত ২৯ মে সদর থানায় একটি মামলা করেন তিনি।
তিনি বলেন, সীমানা বিরোধ স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু এরপর সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরী তার কাছে চাঁদা দাবি করে এবং তার বাড়ির বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য করে।
“আমি চাঁদা না দেওয়ায় তারা আমার ওপর ও আমার ভাইসহ আরও বেশ কয়েকজনের ওপর প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা করে। এতে আমি আর আমার ভাইসহ আরও অনেকে গুরুতর আহত হয়। হামলার পরদিন সুমন ও বাদল চৌধুরী লোকজন নিয়ে আমদের বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাট করে।”
এদিকে বাদল চৌধুরী ও সুমন চৌধুরীর স্বজনরা আছিয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বাদল চৌধুরীর ভাগিনা আমলগীর চৌধুরী বলেন, গ্রামের সালিশ থেকে আছিয়া খানমকে সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়।
“কিন্তু আছিয়া খানম তা না মেনে কাজ শুরু করা আমরা প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে আছিয়া তার লোকজনকে দিয়ে আমার মামাত ভাই ফাহিমকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করে। সে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি সেলিম উদ্দিন বলেন, “দুই পক্ষই মামলা করেছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি কারা প্রকৃত দোষী। এখন পর্যন্ত দুই জনকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”