দশ টাকার চাল: উপকারভোগীর তালিকায় অনিয়ম হবিগঞ্জে

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীর তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের ঘটনা ধরা পড়েছে।

রাসেল চৌধুরী হবিগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2020, 01:02 PM
Updated : 18 June 2020, 01:02 PM

তালিকায় অনেক নাম আছে যাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিছু নাম আছে যেগুলো তালিকায় একাধিকবার উঠেছে।

এসব অনিয়মের কথা গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল স্বীকার করে তা সমাধান করবেন বলে জানান।

এছাড়া নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল তালিকা যাচাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গজনাইপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল প্রাপ্তির তালিকায় মোট উপকারভোগী এক হাজার ১৮৫ জনের নাম রয়েছে। ২০১৬ সালে ওই তালিকাটি প্রণয়ন করা হয়। তখন থেকে উপকারভোগীদের চাল পাওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই এখনও পাননি সে সুবিধা। একটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র।

তালিকা যাচাইয়ে দেখা যায়, কোনো নাম চার বার, কোনোটি তিন বার করে তালিকায় রয়েছে।

এমন একটি নাম হচ্ছে কুটি মিয়া। তার বাড়ি ইউপি চেয়ারম্যানের নিজ গ্রাম সাতাইহালে। তার নাম রয়েছে তালিকার ক্রমিক নং ৬৬৬, ৬৮০, ৭২০, ১০৭৩-এ; অর্থাৎ চার বার।

এমন আরও অনেকের নাম আছে। একাধিকবার নাম পাওয়া গেছে অন্তত ৫০টির মতো। রয়েছে কয়েকজন মৃত ব্যক্তির নামও।

তালিকায় দেখা যায়, ৪৯৯ থেকে ৫০৮ নম্বর পর্যন্ত ক্রমিকে বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে যাদের কয়েকজনের খোঁজ স্থানীয়রা কেউ দিতে পারেননি। তাদের নামের পাশে তারালিয়া গ্রাম লেখা রয়েছে।

তালিকাটি নিয়ে তারালিয়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামটিতে শুধু গোপ সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। তালিকায় যে নাম রয়েছে গ্রামবাসী তাদের কাউকেই চিনেন না। এ নামের কেউ ওই গ্রামে নেই বলে তারা জানান।

এই তারালিয়া গ্রামের অন্তত ২২ জনের নাম আছে তালিকায়; কিন্তু এলাকাবাসী জানায় চাল পান শুধু তিন জন।

এই তালিকায় আরেকটি অনিয়ম হলো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান মিশিয়ে দেওয়া। কোথাও স্বামী মুসলমান-স্ত্রী হিন্দু, ছেরে হিন্দু- বাবা মুসলমান।

তালিকার ৫৮২ নম্বরে আছে আ. আহাদ, যার বাবার নাম পিরিজা সরকার। ৫৮৬ নম্বরে আছে মহেশ সরকার, যার বাবার নাম সুনুজ উল্লাহ। ৫৯২ নম্বরে স্বরসতী সরকার, স্বামী আকবর মিয়া।

গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, তারা ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তালিকায় ৫০টি করে নাম দিয়েছেন। বাকি নামের বিষয়ে কিছুই তাদের জানা নেই। তারা নাম দেননি।

নিজ এলাকার তালিকায় ভূয়া নাম দেখে তারাও অবাক হয়ে যান; ক্ষুব্ধ হন।

এ ব্যাপারে গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “সকলের সমন্বয়ের মাধ্যমেই করা হয়েছে এই তালিকা। এটা আমাদের একটা গাফিলতিও বলা যায়। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছি।”

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রত্যেক ইউনিয়ন খাদ্য বান্ধব কমিটির সভাপতি হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল ওই ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কমিটির সভাপতি।

“চেয়ারম্যানের মূল দায়িত্বই হচ্ছে ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরের চালের সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করে আমাদের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো। এই তালিকা প্রণয়নে যদি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কোনো অনিয়ম করে থাকেন তাহলে সেটা তদন্তে উঠে আসবে।”