চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন

ঠাকুরগাঁওয়ে চুরির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে দুই শিশুকে দলবল নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2020, 04:47 PM
Updated : 12 June 2020, 05:12 PM

এ ঘটনার পর থেকে ইউপি সদস্য জহিরুল ও তার সহযোগীরা পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পীরগঞ্জ থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায়।

তিনি বলেন, “আমরা তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এর সাথে মামলার তদন্ত চলছে।”

গত ৫ জুন দায়ের করা ওই মামলায় পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, তার সহযোগী মোতালেব আলী, সাইদুর রহমান, আনিসুর রহমান, মনসুর আলী, জিয়াবুল ও আব্দুল লতিফকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বরাতে ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের দেওধা গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব আলী তার প্রতিবেশীর স্ত্রীকে অশালীন প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এতে রাজি ছিলেন না ওই গৃহবধূ।

“এরই জের ধরে গত ২২ মে ওই গৃহবধূর ছেলে (১৩) ও তার ভাতিজাকে (১৬) মোবাইল চোর অপবাদ দেন মোতালেব আলী। ওই দিনই স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, মোতালেব আলীসহ অন্যরা মিলে ওই দুই শিশুকে মামলার ৭ নম্বর আসামি আব্দুল লতিফের বাড়ি নিয়ে যান। সেখানে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে সালিশ হয়। তাতে ওই দুই শিশুর হাত-পা বেঁধে মাটিয়ে ফেলে লাঠিপেটা করেন ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা। আর নির্যাতনের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দিও করেন তারা।”

ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, মারপিটের এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা ওই দুই শিশুর বাড়িতে গিয়ে ১৩ বছর বয়সী ওই শিশুর মাকে ভিডিও দৃশ্য দেখান এবং ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইউপি সদস্যসহ তার সহযোগীরা ওই গৃহবধূর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন এবং গৃহবধূর বাড়ি থেকে একটি গরু নিয়ে যান।

এছাড়াও ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামসহ তার সহযোগীরা সাদা কাগজে ওই গৃহবধূ, তার ছেলে ও ভাতিজার স্বাক্ষর নেন এবং এরপর ওই দুই শিশুকে ছেড়ে দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুর উপর বর্বর নির্যাতন চলায় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। শিশু দুটো চিৎকার করে প্রাণভিক্ষা চাইলেও তাদের পেটানো হয়।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বলেন, “ঘটনার পর থেকে ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা আমাকে ও আমার সন্তানদের একঘরে করে রেখেছিল। হাসপাতালেও যেতে দেয়নি। পরে লুকিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আমরা পীরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হই।”

তিনি বলেন, “ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা মিলে আমার ছেলে ও ভাতিজাকে হাত-পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করেছে; এছাড়াও তারা আমাকে নির্যাতন ও খারাপ আচরণ করেছে। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।”

সেনগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামসহ তার সহযোগীরা মিলে দুই শিশুকে হাত-পা বেঁধে যেভাবে নির্যাতন করেছেন। এটি বড় ধরনের অপরাধ। এই নির্যাতন আসলে আদিম যুগের মানে মধ্যযুগীও কায়দায় নির্যাতন। তারা এভাবে নির্যাতন করা ঠিক করেনি। তাদের শাস্তি হোক।”

এদিকে মামলা দায়েরের সাত দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি, এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আসামি ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।