প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার: তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যানের শ্বশুরসহ ‘৫১ আত্মীয়’

করোনাভাইরাস সঙ্কটে দরিদ্রদের আড়াই হাজার টাকা করে সহায়তার তালিকায় এক চেয়ারম্যানের শ্বশুরসহ ৫১ জন আত্মীয়ের নাম থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এম এ রাজ্জাকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 02:34 PM
Updated : 11 June 2020, 07:19 PM

ঈদের উপহার হিসেবে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেজন্য সারা দেশ থেকে অসহায় মানুষের তালিকা সংগ্রহ করা হয়।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ী ইউনিয়নের এ তালিকায় চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেনের শ্বশুরসহ ৫১ জন আত্মীয়ের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ‘এলাকাবাসী’।

এ ইউনিয়নের ৩৬০ জনের চূড়ান্ত তালিকায় চেয়ারম্যানের শ্বশুর, ভায়রা, সহোদর তিন ভাই, তিন শ্যালক, শ্যালকের তিন ছেলেসহ ৫১ জন আত্মীয় ছাড়াও প্রবাসী, ব্যবসায়ীসহ ৩৫ জন সচ্ছল ব্যক্তির নাম থাকার অভিযোগও আনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে টাঙ্গাইলের ডিসি শহীদুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার নগদ অর্থ সহায়তার তালিকায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তদন্ত শুরু হয়েছে।

তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এলাকাবাসীর করা অভিযোগের যাচাই করতে তালিকায় উল্লেখিত মোবাইল নম্বরে ফোন করলে অপর প্রান্ত থেকে কথা বলেন এসহাক আলী। তিনি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের শ্বশুর বলেও স্বীকার করেন।

তবে তার মোবাইলে এখনও প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের টাকা যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, এলাকবাসীর লিখিত অভিযোগ উদ্ধৃত করে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা জহুরা বলেন, “তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেনের শ্বশুর, ভায়রা, সহোদর তিন ভাই, তিন শ্যালক, শ্যালকের তিন ছেলেসহ ৫১ জন নিকট আত্মীয়ের নাম দিয়ে ২৫০০ টাকা করে উত্তোলন করেছে বলে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।”

এছাড়া তালিকায় প্রবাসী, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, স্চ্ছল ও সম্পদশালীদের নাম রয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এ নিয়ে ওই ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন ও ইউপি সদস্য ফরহাদ আলীর বিরুদ্ধে ডিসিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ‘এলাকাবাসী’ এই লিখিত অভিযোগ পাঠায় বলেও জানান এ ইউএনও।

অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, তালিকায় চেয়ারম্যানের ৫১ জন আত্মীয় ছাড়াও পাকা বাড়িসহ ২০/২৫ বিঘা কৃষি জমির মালিক, ওমান প্রবাসী, সচ্ছল ব্যবসায়ীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া চেয়ারম্যানের আত্মীয়তার সুবাদে প্রভাবশালী, ‘ধনাঢ্য বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের নামও’ রয়েছে তালিকায়।

এ অভিযোগে আরো উল্লেখ্য করা হয়েছে, শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ৩৬০ জনের এ তালিকায় ৯টি ওয়ার্ডে সমহারে বণ্টন না করে চেয়ারম্যান ৫১ আত্মীয়সহ তার ওয়ার্ডেই ৮৬ জনের নাম দিয়েছেন। উপকারভোগীর নাম ঠিকানা থাকলেও অন্য জনের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তালিকায় অন্যান্য সরকারি একাধিক সুবিধাভোগী ব্যক্তির নামও রয়েছে।

এসব ব্যাপারে শোলাকুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ও শোলাকুড়ী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি এসএম খাইরুল বাশার সোহেল সাংবাদিকদের জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে সুবিধাবঞ্চিত হয়েছে এলাকার অসহায় গরিব মানুষ।

শোলাকুড়ী বাজার বণিক সতিমির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে নেতা মুরাদ হোসেন, কৃষক আ. আজিজসহ এলাকার অনেকেই জানান, তালিকায় চেয়ারম্যান ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তার আত্মীয়-স্বজনসহ বিত্তশালীদের নাম দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তার ‘টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।’

শোলাকুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেনের কথায় তালিকায় তার স্বজনদের নাম থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তবে নিয়ম মেনেই তালিকা প্রণোয়ন করা হয়েছে দাবি করে সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “আমার আত্মীয়-স্বজনরা তো ইউনিয়নের বাইরের না। তারা যদি গরিব হয় তাহলে তাদের নাম দেওয়া কি অন্যায়?”

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন বলেই একটা গ্রুপ তার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগ করেছে’ বলে চেয়ারম্যানের ভাষ্য।