‘উর্বরতা ফেরাতে’ তিল চাষ হচ্ছে নীলফামারীতে

জমির উর্বরতা ফেরাতে নীলফামারীতে প্রতিবছর তিল চাষ বাড়ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2020, 06:45 AM
Updated : 7 June 2020, 11:34 AM

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, “মাটিতে পাঁচ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকার কথা থাকলেও এ জেলা আছে এক শতাংশেরও কম। এ অঞ্চলে তিল চাষের প্রচলন অত্যন্ত সুখবর।

“তিল চাষ মাটির জৈবঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে রবিমৌসুমে এ জেলায় ১৭ হেক্টর জমিতে ১৭ মেট্রিকটন এবং খরিপ মৌসুমে ৩১ হেক্টর জমিতে ৩২ মেট্রিকটন তিল উৎপাদন হয়েছে। চলতি খরিপ মৌসুমে জেলায় সাত হেক্টর জমিতে তিল উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত মেট্রিকটন, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় বেশি।”

সারাদেশে এবার খরিপ মৌসুমে তিল উৎপদানের লক্ষ্যমাত্রা ৭৬ হাজার মেট্রিকটন ধরা হয়েছে বলে তিনি জানান।

বছর পাঁচেক ধরে এ জেলায় তিল চাষ বাড়ছে বলে সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম রাকিব আবেদীন হিরু জানিয়েছেন।

শনিবার সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বিভন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেতে তিল চাষ হচ্ছে।

দুবাছরি গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন তালুকদার (৭০) বলেন, তিনি অনেক বছর ধরে তিল চাষ করছেন। এবার করেছেন দুই বিঘা জমিতে। তার দেখাদেখি ওই গ্রামে তিলের আবাদ বেড়েছে বলে তিনি জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তিল চাষে জমির উর্বরাশক্তি বাড়ে। রাসায়নিক সার ও জমি নিড়ানির দরকার হয় না। সামান্য শ্রম ও অল্প খরচে প্রতিবিঘায় পাঁচ থেকে ছয় মণ ফলন মেলে। এক বিঘা জমিতে তিল চাষ করে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করা যায়।”

তিন বছর ধরে তিল চাষ করছেন ওই গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম (৩৫)।

“তিন বছরে আমার জমির উর্বরা শক্তি বেড়েছে অনেক। তিল চাষের পর অন্য ফসলের আবাদ ভাল হচ্ছে। তিলের পাতা পড়ে জমির উর্বরাশক্তি অনেক বাড়ে। ফলে পরবর্তী আমন মৌসুমে রাসায়নিক সার না দিয়েও ভাল ফসল পাওয়া যায়।”

ওই এলাকার কৃষক রহমতুল্লাহ (৫৫) জানান, তার এলাকার চাষিরা আলুর পর চৈত্র মাসে তিল চাষ করেন।

তিনি বলেন, “আলুর জমিতে তেমন চাষের প্রয়োজন হয় না। জমি সমান করে তিলের বীজ ছিটালেই চলে। প্রতিবিঘায় প্রয়োজন এক কেজি বীজ, যার বাজার দাম ১০০ টাকা। সেচ, সার, নিড়ানি ছাড়াই তিন মাসের মধ্যে তিল ওঠে। তিলে কোনো রোগবালাই না হওয়ায় কীটনাশকের দরকার হয় না।”

এরপর ওই জমিতে আগাম আমন আবাদের পর তারা আলু চাষ করেন বলে রহমতুল্লাহ জানান।

তিনি বলেন, “তিল বিক্রি করে পরিবারের কিছুটা ব্যয় মেটানোর পর আমন আবাদের খরচে মেটে। আমন আবাদের পর আলুর আবাদ পুরোটাই লাভের মধ্যে থাকে।”

তিল চাষ করে ওই এলাকার কৃষকরা  ঋণ-কর্জ থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

কৃষি কর্মকর্তা হিরু বলেন, “পাঁচ বছর আগে এ এলাকায় তিল চাষ শুরু হলেও এখন অনেকে চাষ করছেন। লাভজনক হওয়ায় এক গ্রাম  থেকে অন্য গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে এর চাষ।

“তিল চাষ একদিকে যেমন চাষির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, তেমনি জমির উর্বরাশক্তি বাড়াতে কাজ করছে।”

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, “তিলগাছ শেকড়ের মাধ্যমে মাটিতে নাইট্রোজেন সংযোজিত করে। তাছাড়া তিলের পাতা জমিতে জৈব পদার্থ সংযোজিত করে। এভাবে তিলগাছ জমির উর্বরতাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।”